আল্লাহ শব্দটি কোথা থেকে এল এ বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। আগেই দেখা গেছে যে, ইসলাম পূর্ব যুগেও প্যাগান আরবরা আল্লাহকে ডাকত। কিন্ত সে আল্লাহ কোন আল্লাহ? কোরান হাদিসের বক্তব্য- এ আল্লাহ সেই আল্লাহ যাকে ইব্রাহিম, ইসহাক, মূসা নবীরা যাকে তাদের প্রভু বলেছে। কিন্তু আসলেই কি তাই?সেই আরব দেশে বিশেষ করে মক্কা মদিনায় যেখানে মোহাম্মদের জন্ম ও ইসলাম প্রচার, সেখানকার প্যগানরা তারাও আল্লাহ কে ডাকত। উদারহরন স্বরূপ- মোহাম্মদের পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ, আবদ+আল্লাহ= আব্দুল্লাহ। আরবী আবদ অর্থ- দাস, অর্থাৎ আল্লাহর দাস। কিন্তু কোন্ আল্লাহর দাস?তখন তো মক্কায় ইসলাম প্রচার হয় নি। অর্থাৎ মক্কার কুরাইশরা ছিল সবাই প্যাগান। যেমন- মোহাম্মদের নিজ চাচা আবু তালিব যার কাছে মোহাম্মদ লালিত পালিত হন, তিনি সর্বাত্মকভাবে মোহাম্মদকে রক্ষা করলেও নিজে ইসলাম গ্রহন করেন নি, প্রকাশ্যেও না, গোপনেও না। আবু তালিব যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত, মোহাম্মদ তার কাছে এসে সর্বশেষ আর্জি জানান ইসলাম গ্রহণ করতে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আবু তালিব ইসলাম কবুল করেন নি।তার মানে আবু তালিব ছিলেন প্যাগান আর তিনিও আল্লাহকে ডাকতেন কিন্তু সেই আল্লাহ অবশ্যই ইসলাম কথিত আল্লাহ নয়, নয় ইহুদী খৃষ্টান কথিত ঈশ্বর। ইসলাম কথিত আল্লাহ হলে মোহাম্মদের আব্দার রক্ষা করা তার পক্ষে অতীব সহজ হতো। অন্যদিকে প্যাগানদের কথিত আল্লাহ ইহুদী বা খৃষ্টানদের আল্লাহও নয়, তা যদি হতো তাহলে তারা প্যাগান বা পৌত্তলিক হতো না।

কিন্তু বাস্তবে ইসলাম কথিত আল্লাহই ছিল প্যগানদের আল্লাহ কিন্তু মোহাম্মদ দাবী করতেন তা হলো ইহুদী ও খৃষ্টানদের ডাকা আল্লাহ। আবু তালিব ইসলাম গ্রহণ করেনি কারন মোহাম্মদ আল্লাহকে স্বীকার করলেও বাকী দেব দেবীকে অস্বীকার করেছিলেন। অন্যদিকে ইহুদি ও খৃষ্টানরা মোহাম্মদ কথিত আল্লাহকে গ্রহন করেনি কারন এ আল্লাহর নাম তাদের তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে উল্লেখ নেই, উল্লেখ ছিল না কাবা ঘরের নাম তাদের কিতাবে। এটাও উল্লেখ ছিল না যে ইসরায়েলিটিস এর বাইরে কোন নবী আগমন করবে।মোহাম্মদ ছিলেন ইসরায়েলিটিস এর বাইরের।মোহাম্মদ কাবা ঘর পৌত্তলিকদের মত প্রদক্ষিন করতেন, কাবার ভিতরের কাল পাথরকে চুমু খেতেন যা ছিল ইহুদী খৃষ্টানদের ঐতিহ্য বিরোধী। একারনে তারা বুঝতে পারত মোহাম্মদ যে আল্লাহকে ডাকেন তা তাদের কিতাব বর্ণিত ঈশ্বর বা আল্লাহ নয়। অর্থাৎ মূলত: মোহাম্মদ কোরাইশদের আল্লাহকে গ্রহণ করলেও কুরাইশরা তা বুঝতে পারেনি, কিন্তু ইহুদী খৃষ্টানরা তাদের কিতাব অনুযায়ী বুঝতে পারে মোহাম্মদ আসলে প্যগানদের আল্লাহকেই ডাকছে। এভাবে মোহম্মদ পৌত্তলিক কুরাইশ ও ইহুদী-খৃষ্টান দু পক্ষের কাছেই অগ্রহণীয় হয়ে যান।কিন্তু এ ধরনের রিস্ক নেয়া ছাড়া মোহাম্মদের উপায়ও ছিল না। কারন শুধুমাত্র কুরাইশদের দলে টানলে তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, কারন তাদের সংখ্যা খুব বেশী না যাদেরকে দিয়ে একটা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাকে ইহুদী-খৃষ্টানদেরকেও দলে টানতে হবে, ছলে বলে কলে কৌশলে।

অতীব দু:খজনক বিষয় হলো- ইসলাম সম্পর্কিত কোন উৎস বা কিতাবে কুরাইশ প্যাগানরা কোন আল্লাহর উপাসণা করত এ ব্যপারে কোন ধারনা দেয়া হয়নি।আর ইসলাম পূর্ব কোন ইতিহাসও মুসলমানরা সংরক্ষন করেনি যার মাধ্যমে জানা যেতে পারে প্যাগানদের আল্লাহ আসলে কে। ইসলাম পূর্ব যুগকে মুসলমানরা অন্ধকার যুগ বা বর্বরতার যুগ হিসাবে আখ্যায়িত করে আর সেকারনে তারা সে যুগের কোন ইতিহাস সংরক্ষন করেনি। তাদেরকে শুধুমাত্র পৌত্তলিক বা প্যগান হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে ও তাদেরকে ভীষণভাবে ঘৃণা ও অভিসম্পাত করা হয়েছে। সুতরাং প্যগানদের আল্লাহ আসলে কে ছিল তা জানতে আমাদেরকে অন্য উৎসের সাহায্য নিতে হবে। তবে এখানেও একটা সমস্যা আছে তা হলো-যা ইসলামের পক্ষে যায় এরকম কোন ঘটনা যদি ইসলাম নিরপেক্ষ সূত্রে উল্লেখ থাকে তা মুসলমানদের গ্রহণ করতে অতিশয় আতিশয্য লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু যা বিপক্ষে যায় তাকে বিকৃত বলে আখ্যায়িত করতে তাদের সামান্যতম দেরী হয় না। এখন তারা নিজেরাও ইতিহাস সংরকক্ষণ করেনি, আবার অন্যের নিরপেক্ষ ইতিহাসও তারা গ্রহণ করবে না এটা একটা মারাত্মক গোয়ার্তুমী। যারা শালিস মানবে অথচ তালগাছটা তাদের দাবি করে বসে থাকবে তাদের সাথে কোন যুক্তি তর্ক করা যায় না। বিষয়টাও আদতে তাই। মুমিন বান্দারা কোন যুক্তি তর্কের ধার ধারে না।যুক্তির ধার তারা না ধারলেও তাদেরকে ব্যখ্যা দিতে হবে প্যগানরা কাকে আল্লাহ ডাকত। দু:খের বিষয় এব্যাপারে তারা কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই মনগড়া কথা বলে। Allah শব্দটি আরবী বা আরামাইক বা হিব্রু যে ভাষা থেকেই উদ্ভুত হোক না কেন তার অর্থ একজন দেবতা বা বড়জোর প্রধান দেবতা এরকম অর্থ মেনে নেয়ার কারন প্রাগ ঐতিহাসিক যে নিদর্শণাদি দেখা যায় সেসব।।এর আরও একটা জোরালো কারন হলো-তৌরাত ও নুতন নিয়মের কোথাও আল্লাহ শব্দটি লেখা নেই। আল্লাহ শব্দটি তৌরাত ও নুতন নিয়মে লেখা হয় যখন ইসলামী সাম্রাজ্যে সেগুলোকে আরবীতে অনুবাদ করা হয় তখন।আর ইসলামী পন্ডিতরা এটাকেই মহা উৎসাহে প্রচার করে যে- ইহুদী ও খৃষ্টানদের কিতাবে আল্লাহ শব্দটি লেখা আছে। এটা অনেকটা সম্রাট আকবরের আমলে কিছু ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে রচিত ভবিষ্যপূরাণ নামক একটা ভুয়া তথাকথিত হিন্দু কিতাবে মোহাম্মদের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করার ঘটনার মত। কথা হচ্ছে প্যগানরা এ শব্দটি দিয়ে কি বুঝাত বা তারা কোন্ আল্লাহর উপাসণা করত। এখানে http://en.wikipedia.org/wiki/Allah উৎস বলছে, প্রাক ইসলামি যুগে আরবরা আল্লাহ বলতে একজন প্রধান দেবতা বুঝাত যার আবার তিনজন কন্যা ছিল যাদের নাম- আল-লাত, উজ্জা ও মানাত। শয়তানের আয়াত বলে যে আয়াত কোরানে আছে তার উৎপত্তির কিচ্ছাও কিন্ত এটাই। কুরাইশরা চাইত মোহাম্মদ তার ইসলাম প্রচার করুক সমস্যা নাই, কারন তিনি তো তাদেরই আল্লাহকে ডাকে , কিন্তু তারা চাইত মোহাম্মদ যেন তাদের ওই তিন দেবীকেও স্বীকার করে নেয়। দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদ ইসলাম প্রচার করছেন কিন্তু কোন ক্রমেই কুরাইশদেরকে দলে ভিড়ানো যাচ্ছে না, একারনে তার মনে দারুন হতাশা। একারনেই মোহাম্মদ শয়তানের আয়াত নামক আয়াত নাজিল করেন যাতে করে কুরাইশরা দলে ভেড়ে। মোহাম্মদের এ আয়াত নাজিলের মাধ্যমেই বোঝা যায় তিনি আসলেই কুরাইশদের আল্লাহকে ডাকতেন।ইহুদী বা খৃষ্টানদের আল্লাহ নয়।
শয়তানের আয়াতটা ছিল মূলত এরকম:

তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? সূরা- আন-নাজম ৫৩: ১৯, মক্কায় অবতীর্ন।
এর পরের আয়াত ছিল – যারা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে।অর্থাৎ এ তিন দেবী কুরাইশ ও আল্লাহর মাঝে মধ্যস্থতা করে।

পরবর্তীতে মোহাম্মদ উক্ত শেষ আয়াতটি পরিবর্তন করে তার পরিবর্তে নিচের আয়াত সংযুক্ত করেন এই অজুহাত দিয়ে যে জিব্রাইল এসে তাকে জানিয়েছে শয়তান নাকি তার রূপ ধরে এসে মোহাম্মদের কাছে শয়তানের আয়াত বলে গেছে ,কিন্তু আল্লার সর্বশ্রেষ্ট নবী যিনি আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেন না(তার ৯ টা স্ত্রীর কোন জনের সাথে কবে রাত কাটাবেন তাও আল্লাহ বলে দেন), কাউকে বিয়ে করেন না, এমনকি পায়খানা প্রস্রাব পর্যন্ত করেন না , তার কাছে শয়তান এসে তার আয়াত বলে গেল, মনে হয় আল্লাহ তখন ঘুমাচ্ছিল আর জিব্রাইল বসে গাঁজা টানছিল আর তাই তারা টের পায়নি।

পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য? এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন। এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।কোরান, সূরা- আন-নাজম ৫৩: ২০-২২, মক্কায় অবতীর্ন।

সুতরাং এ থেকে পরিষ্কার যে, প্যগানদের আল্লাহ খৃষ্টান বা ইহুদীদের ঈশ্বর বা আল্লাহ নয়। মোহাম্মদের পিতা আব্দুল্লাহ ছিল প্যগানদের আল্লাহ বা প্রধান দেবতা আল্লাহর দাস অন্তত নামকরনের দিক থেকে।http://www.muslimhope.com/OriginsOfIslam.htm উৎস বলছে প্রায় একই কথা।এটা বলছে আরবী ভাষায় ইহুদী ও খৃষ্টানরা স্রষ্টার নামকে আল্লাহ হিসাবে ব্যবহার করলেও আরব প্যগানদের কাছে ছিল তা প্রধান দেবতা যার ছিল তিন কন্যা ও তাছাড়া যে ছিল কাবা ঘরে রক্ষিত ৩৬০ টি দেব দেবীর প্রধান। এ ছাড়াও আল্লাহ ছিল কুরাইশদের প্রধান দেবতা যাকে তারা মানত।মূলত: কুরাইশরা অন্য দেব দেবীর চাইতে এই প্রধান দেবতা আল্লাহ সহ তার তিন কন্যাকেই বেশী মান্য গন্য করত ও তাদের উপাসণা করত। এমনকি বছরের একটা নির্দিষ্ট দিনে বা দিনসমূহে কুরাইশরা উপবাস করত(রোজা), দান করত(যাকাত/ফিতরা), মক্কার কাবা শরিফে পূজা দিত বা উপাসনা করত, তা ছাড়া আরবের বিভিন্ন স্থান হতে মক্কায় আসত(হজ্জ)। আর বলাই বাহুল্য, প্রাক ইসলামী যুগের এসব বিধানই পরবর্তীতে ইসলামে যুক্ত হয়েছে সামান্য ভিন্ন আকারে। ইসলামের বহু আগে গোটা আরব ভূমিতে লোকজন চন্দ্র দেবতার উপসনা করত যার বহু প্রত্নতত্ত্বিক নজীর পৃথিবীর বিভিন্ন যাদুঘরে বিদ্যমান, এমনকি চন্দ্র দেবতার অনেক মন্দিরও আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ব্যপারে প্রত্নতাত্ত্বিক ছবি সহ তথ্য প্রমান দেখতে হলে যেতে হবে এখানে-http://www.journeytojesus.com/ArchaelogicalGallery.pdf, http://www.creationstudies.org/Education/moon-god.html, http://www.yoel.info/moonotheism.htm, http://www.investigateislam.com/moonGod.htm, । আরব অঞ্চলে প্রচলিত চন্দ্র দেবতার জন্যই একটা মন্দির পরবর্তীতে মক্কাতে গড়ে ওঠে যেখানে এক সময় কুরাইশরা প্রাধান্য বিস্তার করে। এ চন্দ্র দেবতারই ছিল তিনটি কন্যা যাদের নাম ওপরে দেয়া আছে। মূলত: এ চন্দ্র দেবতাকেই কুরাইশরা উপাসণা করত যাকে তারা Al-Ilah বা সংক্ষেপে Allah বলে ডাকত। এ চন্দ্র দেবতার প্রতীক ছিল বাঁকা চাঁদ। কুরাইশদের আল্লাহ যে মুলত সেই চন্দ্র দেবতা তা বোঝা যায় প্রাক ইসলামী যুগে যেসব উপসণালয় আকিষ্কৃত হয়েছে তাতে চন্দ্র দেবতা ও বাঁকা চাঁদের ব্যপক উপস্থিতি দেখে। আমরা লক্ষ্য করি ইসলামেও চাঁদের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক।যদিও কোরানে বলা হয়েছে- চাঁদ সময় নির্নয়ের জন্য আল্লাহ তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু তার পরও ইসলামের সব ক্ষেত্রে যেভাবে বাঁকা চাদেঁর ব্যবহার সেই ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে চলে আসছে তাতে বোঝা যায় আল্লাহর সাথে চাদেঁর একটা অলিখিত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। চাদেঁর চেয়ে সূর্যই বরং আমাদের দৈনন্দিন সময় নির্নয়ের জন্য বেশী সহায়ক, অথচ ইসলামের কোথাও সূর্যের প্রতীক ব্যবহার করা হয়না। তার অর্থ চাঁদ ইসলামে শুধু সময় নির্নয়ের উপাদানের চাইতে অনেক বেশী কিছু। যা পরিস্কারভাবে নির্দেশ করে যে মোহাম্মদের আল্লাহ এ চাঁদ সম্পর্কিত আল্লাহ তথা পৌত্তলিকদের কথিত আল্লাহ , কোন ক্রমেই ইহুদী ও খৃষ্টানদের কথিত ঈশ্বর বা আল্লাহ নয়। এ চন্দ্র দেবতাকে আরবরা হাবুল বলেও সম্বোধন করত। অর্থাৎ এ হাবুলই হলো চন্দ্রদেবতা আর এ চন্দ্র দেবতাই হলো কোরানের আল্লাহ।যেমন ইসলাম অনুযায়ী- আল্লাহর নাম হলো ৯৯ টা। এছাড়াও প্রাক ইসলামি যুগে আরবের প্যগানরা কোন কোন সময় বিশেষ পাথর খন্ডকে দারুন শ্রদ্ধার চোখে দেখত যেমন বর্তমানে হিন্দুরা তা করে থাকে শিবলিঙ্গ নামক পাথর খন্ডকে।মক্কার কাবার মধ্যে যে কাল পাথর খন্ড আছে সেটাকেই তেমনি প্যগানরা ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে দেখত, যা মোহাম্মদ তার ইসলামেও চালু করেছেন, কারন একে ভক্তি করলে একে চুমু দিলে নাকি সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।অর্থাৎ, মোহাম্মদ মূলত কোরাইশদের পৌত্তলিক প্রথাকে একটু পরিবর্তিত ফর্মে প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ এই পাথরকে পূজা করতে মোহাম্মদের একজন বড় সাহাবী ওমর ইবনে খাত্তাব অনেকটাই অস্বীকার করেছিল যা দেখা যায় নিচের হাদিসে-

আবিস বিন রাবিয়া বর্নিত- ওমর কাল পাথরের নিকট আসলেন এবং একে চুমু দিলেন, তারপর বললেন-আমি জানি তুমি একটা পাথর বৈ আর কিছু নও, তুমি কারও উপকারও করতে পার না , অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহকে না দেখতাম তোমাকে চুমু খেতে আমি তোমাকে চুমু খেতাম না। বুখারী, বই-২৬, হাদিস-৬৬৭

যায়েদ বিন আসলাম বর্নিত- ওমর বিন খাত্তাব কাল পাথরকে উদ্দেশ্য করে বললেন- আল্লাহর কসম, আমি জানি তুমি একটা পাথর ছাড়া আর কিছু নও, তুমি না পার কারো উপকার করতে, না অপকার। নবীকে যদি আমি না দেখতাম তোমাকে চুমু খেতে আমি তোমাকে কখনও স্পর্শ করতাম না। বুখারী, বই-২৬, হাদিস-৬৭৫

অর্থাৎ সেই মোহাম্মদের আমলেও নব্য মুসলমানদের কাছে এ কাল পাথরকে এত সম্মান করার বিষয়টি বিসদৃশ লেগেছিল আর তারই বহি:প্রকাশ দেখা যায় উক্ত হাদিস দুটিতে। কিন্তু ইহুদি বা খৃষ্টানরা কখনই এ কাল পাথরকে চুমু খেত না বা কখনই কাবা ঘরে এসে উপসণা করত না,কাবা ঘরকে প্রদক্ষিন করত না।কারন তারা একে পৌত্তলিক আরবদের একটা কুসংস্কার হিসাবে মনে করত।ইহুদী খৃষ্টান ধর্মে তাদের উপাসনালয়কে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিন করার কোন প্রথা চালু ছিল না কখনও। এ ধরনের রীতি ভারতেও দেখা যায় যে পূণ্যার্থীরা কোন কোন মন্দিরের চারপাশে পূণ্য লাভের আশায় প্রদক্ষিন করছে। ইসলাম যদি ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংস্করন হয়ে থাকে- তাহলে তাদেরও এ পাথরকে সম্মান করার কথা , তাদের উপাসনালয়গুলিকে প্রদক্ষিন করার রীতি চালু থাকার কথা, কিন্তু তা তারা করত না বা ছিল না। বস্তুত এ কাল পাথর ছিল নিতান্তই পৌত্তলিক কুরাইশ বা আরবদের একান্ত নিজস্ব ধর্মীয় ঐতিহ্য। মোহাম্মদ এ পৌত্তলিক ঐতিহ্য যেমন- কাবা ঘরের চারপাশে প্রদক্ষিন, কাল পাথরকে পূজা বা চুম্বন করা এসব তার ইসলামে বহাল করেছেন। ইসলামের দাবী অনুযায়ী যারা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করে না, অথচ তারা পূন্যের আশায় কাবা ঘরে রক্ষিত কাল পাথরকে চুমু খাচ্ছে, এটা বড়ই বেমানান।একটা সামান্য পাথরকে শ্রদ্ধা সহকারে চুমু খাচ্ছে পূণ্য লাভের আশায় এটা যদি পাথর পূজা না হয় তো কিসে পাথর পূজা হয় তা ঠিক বোধগম্য নয়। বিষয়টি বর্তমানে অনেক আধুনিক মনা মুসলমানকে বিব্রত করে বলে লক্ষ্য করা যায় ও এর কোন যুক্তি গ্রাহ্য ব্যখ্যাও দিতে পারে না। একটাই ব্যখ্যা যা আবার সেই বিশ্বাস সম্পর্কিত। তা হলো- এ পাথর নাকি এসেছে বেহেস্ত থেকে, যখন মক্কায় পতিত হয় তখন তার বর্ন ধবধবে সাদা ছিল। শত শত বছর ধরে মানুষের পাপ গ্রহন করার ফলে নাকি তা কাল হয়ে গেছে। একটা স্বেত পাথর মানুষের পাপ গ্রহন করে কাল হয়ে গেছে এ ধরনের উদ্ভট কথা একমাত্র কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞ ও মূর্খ মানুষরা ছাড়া কারাই বা বিশ্বাস করবে। এ ধরনের একটা বিশ্বাস হিন্দুদের মধ্যেও দেখা যায়। তাদের অন্যতম দেবতা শিব দেবতাদের সমূদ্র মন্থনকালে যে বিষ উৎপন্ন হয়েছিল তা সে নিজেই গ্রহন করে দুনিয়াকে রক্ষা করে, এর ফলে তার কন্ঠ বা গলা নীল বর্ণ ধারন করে। হিন্দুদের আচরিত ধর্মকে যদি পৌত্তলিক ধর্ম বলে ধরা হয়, তাহলে পৌত্তলিকতার দোষে ইসলামও দুষ্ট। যাহোক, একটা পাথর শত শত বছর ধরে মানুষের স্পর্শের কারনে তা কিভাবে সাদা রং থেকে কাল রং এ পরিবর্তিত হয় তা সম্ভবত ইসলামী বিজ্ঞানীরা এর একটা ভাল ব্যখ্যা দাড় করাতে পারবে।
মক্কার পত্তন কখন হয় সে সম্পর্কে একটা তথ্য এরকম-
The early Arabian population consisted primarily of warring nomadic tribes. When they did converge peacefully, it was usually under the protection of religious practices.[24] Writing in the Encyclopedia of Islam, Wensinck identifies Mecca with a place called Macoraba mentioned by Ptolemy. His text is believed to date from the second century AD, about 500 years before the coming of Muhammad,[25] and described it as a foundation in southern Arabia, built around a sanctuary. It probably did not become an area of religious pilgrimage until around 500 A.D. It was then that the Quraysh tribe (into which Muhammad was later born) took control of Macoraba, and made an agreement with the local Kinana Bedouins for possession.[26] The sanctuary itself, located in a barren valley surrounded by mountains, was probably built at the location of the water source today known as the Zamzam Well, an area of considerable religious significance.( http://en.wikipedia.org/wiki/Kaaba )

According to Sarwar,[31] about 400 years before the birth of Muhammad, a man named “Amr bin Lahyo bin Harath bin Amr ul-Qais bin Thalaba bin Azd bin Khalan bin Babalyun bin Saba”, who was descended from Qahtan and king of Hijaz (the northwestern section of Saudi Arabia, which encompassed the cities of Mecca and Medina), had placed a Hubal idol onto the roof of the Kaaba, and this idol was one of the chief deities of the ruling Quraysh. The idol was made of red agate, and shaped like a human, but with the right hand broken off and replaced with a golden hand. When the idol was moved inside the Kaaba, it had seven arrows in front of it, which were used for divination (http://en.wikipedia.org/wiki/Kaaba)

এখানে দেখা যাচ্ছে মোহাম্মদের জন্মের ৫০০ বছর আগে মক্কার পত্তন ঘটে ও একটা উপাসণালয় তৈরী করা হয়, তবে ৫০০ খৃষ্টাব্দের আগে এটা ধর্মীয়ভাবে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আসে না। আর কুরাইশরা এখানে প্রাধান্য বিস্তার করে মোহাম্মদের আবির্ভাবের আনুমানিক ৪০০ বছর আগে। তবে আমি নিশ্চিত ভাবে জানি মুমিন বান্দারা এ ধরনের তথ্য গ্রহণ করবে না। পক্ষান্তরে, তারা এর বিপরীতে কোরান হাদিসে বর্নিত মোহাম্মদের কল্প কথা ছাড়া আর কোন তথ্যই হাজির করতে পারে না, পারবেও না।

ইসলামে এটা দাবী করা হয়-ইসলামের আল্লাহ সেই আল্লাহ যাকে ইব্রাহিম, মূসা , ইসা উপাসণা করেছেন। তাহলে তৌরাত ও বাইবেলের নূতন নিয়মে তারা সৃষ্টিকর্তাকে যে নামে ডাকবে বার বার না হলেও দু একবার তার উল্লেখ কোরানে থাকার কথা। তৌরাতের হিব্রু ও আরামাইক ভাষায় স্রষ্টাকে অসংখ্যবার বলা হয়েছে- Yehweh ও Elohim । কোরানে স্রষ্টার নাম বলতে গিয়ে একবারও এ শব্দ দুটি উচ্চারন করা হয় নি। অথচ হিব্রু ভাষা ও আরবী ভাষার উৎস এক ও এদের মধ্যে অনেক শব্দেরই মিল আছে।অনেকটা আমাদের বাংলা ও অসমীয়া ভাষার মত। তৌরাত কিতাবে যে সব নবীর কথা বলা হয়েছে যেমন- আদম, নুহ, ইব্রাহীম, ইসহাক, মুসা ইত্যাদির নাম অনেকবার নেয়া হয়েছে আসল হিব্রু উচ্চারনে। কিন্তু তৌরাত বা ইঞ্জিল শরিফে যেমন একবারও আল্লাহ শব্দটি নেই, তেমনি কোরানে নেই একবারও স্রষ্টার নাম হিসাবে Yehweh ও Elohim শব্দ দুটি। এ দিয়ে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়- বাইবেলের ঈশ্বরের সাথে কোরানের ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নেই। কিছু ইসলামী পন্ডিত দাবী করে-খৃষ্টানরা যে alleluyah শব্দটি উচ্চারন করে তার প্রথম অংশ alle এটা নাকি আল্লাহ। কিন্তু alleluyah শব্দটা হলো এরকম- alle- praise, lu-to, yah-Yaweh অর্থাৎ এখানে স্রষ্টা যাকে তারা হিব্রুতে Yaweh বলে ডাকে তার প্রশংসা করছে অথচ আরবীতে Allah শব্দের অর্থ praise বা প্রশংসা নয় , বরং তার অর্থ Al-The, Ilah/lah- Deity অর্থাৎ প্রধান দেবতা। এছাড়া তারা আরও দাবী করে যে যীশু খৃষ্টকে যখন ক্রুশে বিদ্ধ করে ঝুলিয়ে রাখা হয় তখন তিনি বলেছিলেন- Eli, Eli Sabbathani এটা আরামাইক শব্দ যার অর্থ হে ঈশ্বর হে ঈশ্বর, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ? এখানে বিষয় হলো আরামাইকে Eli অর্থ ঈশ্বর, কোন দেবতা বা দেবী নয় আর Eli থেকে Allah শব্দও উদ্ভুত হয় নি, হয়েছে Al ও Ilah দুটি আরবী শব্দ থেকে। তার চেয়ে বড় আজব খবর হলো- ইসলাম কিন্তু বিশ্বাসই করে না যে যীশু খৃষ্টকে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।অথচ তারা আবার Eli এর সাথে Allah এর কিছুটা উচ্চারনগত মিল থাকাতে যীশু যখন ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে Eli Eli উচ্চারণ করেছেন তখন তিনি যে কুরানের Allah কে ডাকা ডাকি করছেন তা অতি শীঘ্রই আবিষ্কার করে ফেলেছে। এখন বিষয়টা যে ভীষণ রকম আজগুবি শুনায় এজন্যে ইসলাম কিচ্ছা তৈরী করতে দেরী করেনি। আর তা হলো- যীশুকে যখন ক্রুশে বিদ্ধ করা হয় তখন আল্লাহ তাড়াতাড়ি তাকে জীবিত বেহেস্তে তুলে নিয়ে যায় আর যীশুর পরিবর্তে যিহুদা নামের এক লোককে সেখানে ঝুলিয়ে রাখে আল্লাহ (এটা অবশ্য আমার শোনা কথা, কোন রেফারেন্স দিতে পারব না)।এ কিচ্ছা শুনতে যতই আজগুবি হোক, বাইবেলের নতুন নিয়মে যে আল্লাহ শব্দটি আছে তা প্রমান যে করতেই হবে তা সে যত গোজামিল লাগুক তা দিতে হবে কোন সমস্যা নেই। বাইবেলের পুরাতণ নিয়ম বা নুতন নিয়মের কোথাও আল্লাহ শব্দটি নেই। কিন্তু আরবী বাইবেলে আল্লাহ শব্দটি আছে। কেন আছে? অত্যন্ত সহজ এর উত্তর। খৃষ্টিয় নবম শতাব্দিতে মূলত: বাইবেলের আরবী অনুবাদ করা হতে থাকে আর ততদিনে গোটা আরব সহ আশপাশের অনেক যায়গাতে ইসলাম তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তাই তাদের শাসনামলে আরব মুসলিম বা আরব খৃষ্টানদের অনুবাদকৃত বাইবেলে যদি আল্লাহ শব্দটির উল্লেখ থাকে তাতে আশ্চর্য হওয়ার তো কিছু নেই। কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো বাইবেলের এ আল্লাহ ইসলামের আল্লাহ নয়। এটা অনেকটা সম্রাট আকবরের আমলে রচিত ভবিষ্য পূরাণে উল্লেখিত মোহাম্মদ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বানীর মত। অনেক মুসলিম পন্ডিতই এসব ভবিষ্যদ্বানী দেখিয়ে অমুসলিমদেরকে বিশেষ করে হিন্দুদেরকে ধোকা দেয়, আর যারা এসব কিতাবের উৎস সম্পর্কে জানে না, তারা ধোকা খায়ও। যেকারনে দেখা যায়- এদের ধোকায় পড়ে মাঝে মাঝে দু একজন ইসলাম ধর্মেই দীক্ষাও গ্রহন করে। যা আবার তারা ইসলামের মহিমা হিসাবে প্রচার করে থাকে(উৎস:http://www.letusreason.org/islam6.htm)। যেমন গিরীশ চন্দ্র সেন তার বাংলায় অনুবাদিত কোরানে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করেন নি, ব্যবহার করেছেন ঈশ্বর। তাহলে তো হিন্দু বা খৃষ্টানরা বলতে পারে- কোরানে তাদের স্রষ্টার নাম লেখা আছে। কিন্তু হিন্দু বা খৃষ্টানরা এখনও অতটা উজবুক হয় নি যে সেটা করতে যাবে। কারন তারা ভালমতই জানে যে কোরান মোহাম্মদ কথিত ও তার সাহবীদের রচিত একটা জগাখিচুড়ি কিতাব ছাড়া আর কিছুই নয়।এরকম জগাখিচুড়ি কিতাবে তাদের ধর্ম সম্পর্কে উল্লেখ আছে প্রমান করতে যেয়ে তারা নিজেদের ধর্মকে জগাখিচুড়ি বানানোর মত অত বোকা নয় যদিও তাদের ধর্ম ইসলামের চাইতেও আরও বেশী জগাখিচুড়ী মার্কা।

মক্কার কাবা ঘর আসলে ছিল পৌত্তলিক আরবদের একটা মন্দির যেখানে বহু দেব দেবীর মূর্তি ছিল। সেকারনে কাবা ঘর আরব পৌত্তলিকদের জন্য একটা পবিত্র ঘর ছিল আর তাই তারা প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এখানে জড় হতো, দেব দেবীদের পূজা করত, দেবতাদের উদ্দেশ্যে পশু বলি দিত। কাবা ঘরকে প্রদক্ষিন করত, কাল পাথরকে পবিত্র জ্ঞান করে তার সামনে মাথা নোয়াত ও চুমু খেত। ইহুদী ও খৃষ্টানরা কখনই এসব ধর্মীয় আচার আচরন কাবা ঘরে পালন করত না, আর কাবা ঘর তাদের কাছে কোন পবিত্র ধর্মীয় উপাসনালয়ও ছিল না। ইসলাম দাবী করে ইব্রাহীম, ইসহাক, মূসা, ইসা এদের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী মোহাম্মদের আগমন।তাই যদি হবে, তাহলে মোহাম্মদের আবির্ভাবেরও বহু আগে থেকে মক্কার কাবা ঘর ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছেও পবিত্র উপাসনালয় হওয়ার কথা। কারন তা মোহাম্মদের মতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম আল্লাহর ঘর যার নাকি পত্তন হয়েছিল প্রথম মানব আদমের হাতে। এর পর হযরত ইব্রাহীম ও তার পূত্র ইসমাইলের হাতে নতুন করে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় কারন তা ইতোপূর্বে নূহ নবীর আমলকার কথিত মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়ে গেছিল। এটাই যদি সত্যি হয়, ইসলামের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত তো ইসলামের সাথে খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্মের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব ছিল না, আর এরা উভয়ই আদম, নূহ, ইব্রাহীম, ইসহাক, যীশূকে নবী হিসাবে সম্মান করে (সম্পূর্ন বা আংশিক), তাহলে তাদেরই ধারাবাহিকতায়, মক্বার কাবা ঘর ইহুদি ও খৃষ্টানদের জন্যও পরিত্র উপাসনালয় হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তা কোন কালেই ছিল না বা হয় নি। তবে মক্কা বা মদিনায় বসবাস কারী ইহুদি ও খৃষ্টানরা পৌত্তলিকদের কাবা ঘরকে অসম্মানও করত না। কারন কাবা ঘরের সামনে বৎসরে একটা নির্দিষ্ট সময় আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পৌত্তলিকরা এসে জড় হতো, এর ফলে সেখানে ব্যবসা বানিজ্য করার সুযোগ ছিল আর ইহুদী খৃষ্টানরা সে সুযোগ গ্রহণ করত। মক্কা বা মদিনায় বসবাসকারী সকল খৃষ্টান ও ইহুদীদের মহা পবিত্র উপাসনালয় ছিল যেরুজালেমের সলোমনের মন্দির যাকে পরে মুসলমানরা নাম দেয় মসজিদুল আকসা। এর কারন কি ? খুব সহজেই বোঝা যায়, কাবা আদৌ আদম বা ইব্রাহীম দ্বারা তৈরী হয় নি, এ ধরনের কোন তথ্য তৌরাত ও ইঞ্জিল শরিফে উল্লেখ নেই। অথচ কবে সলোমনের মন্দির বা বায়তুল মুকাদ্দাস জেরুজালেমে তৈরী হয়েছিল তার বিস্তারিত উল্লেখ আছে।আর তখনই ইসলামী পন্ডিতরা বলে বাইবেলকে বিকৃত করা হয়েছে। কি আজব ব্যপার, ইসলাম আবির্ভাবের বহু পূর্বেই তৌরাত সংকলিত হয়েছে, আর সেটার শত শত কপি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা খৃষ্টান বিশ্বে।এটা কি করে সম্ভব যে মোহাম্মদের জন্মের বহু পূর্বেই ইহুদী ও খৃষ্টানরা শলাপরামর্শ করে তাদের কিতাব থেকে মক্কার কাবা ঘর সম্পর্কিত বিষয়াবলী বাদ দিয়ে দেবে ? ইসলামি মতে কাবা ঘর যদি দুনিয়াতে আল্লাহর প্রথম ঘর হয়ে থাকে আর তার সাথে যদি ইব্রাহীমের স্মৃতি জড়িত থাকে তাহলে তার উল্লেখ অবশ্যই তৌরাত ও ইঞ্জিল গ্রন্থে থাকার কথা, কারন ধারাবাহিকতার সূত্র ধরে তৌরাতের পর ইঞ্জিল এর পর কোরান অবতীর্ণ হয়েছে বলেই দাবী মোহাম্মদ তথা মুসলমানদের। কিন্তু দুর্ভাগ্য জনকভাবে মক্কার কাবা ঘর তো দুরে কথা , খোদ মক্কার কথাও কোথাও লেখা নেই তৌরাত ও ইঞ্জিল শরিফে। এ থেকে এটাও বোঝা যায়- প্যলেষ্টাইনের থেকে প্রায় হাজার মাইলেরও বেশী দুরের অত্যন্ত রুক্ষ্ম ও কঠিন মরুভূমিতে অবস্থিত এ মক্কার তখনও পত্তন ঘটেনি, আর ঘটে থাকলেও তার নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার মত তেমন অবস্থা ছিল না। আর তাই তা কখনই ইহুদি ও খৃষ্টানদের পবিত্র স্থান ছিল না। ইহুদী ও খৃষ্টান উভয়েই বিশ্বাস করে তাদের পূর্ব পুরুষ হলো ইব্রাহিম যার বংশধর তারা, তাহলে তার তৈরী মসজিদ বা উপাসণালয় তাদের কাছেও পবিত্র হওয়ার কথা। অথচ তা কখনই ছিল না। কারন কি ? তার কারন, এটা ছিল আরবের অন্যান্য পৌত্তলিক পুজারী গোষ্ঠির মত একটা গোষ্ঠী কুরাইশদের নিজস্ব চন্দ্রদেবতার মন্দির, এর সাথে ইব্রাহিমের কোন সম্পর্ক কোনকালেই ছিল না। মোহাম্মদই মূলত: এর সাথে ইব্রাহীমের সম্পর্ক তৈরীর প্রচেষ্টা চালায়, ইব্রাহীমের সাথে নিজেকে সম্পর্কিত করার জন্য যাতে ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে তার অনুসারীতে পরিনত করা যায়। ইতোপূর্বেকার কোন ইতিহাস বা এমনকি বাইবেল সাক্ষ্য দেয় না, কাবা ঘর আসলে ইব্রাহীম ও তার পূত্র ইসমাইল কর্তৃক তৈরী হয়েছিল। এটা সম্পূর্নত:ই, কোরান তথা মোহাম্মদের নিজস্ব দাবী। আর যেহেতু বাইবেল সাক্ষ্য দেয় না যে কাবা ঘর ইব্রাহীমের দ্বারা তৈরী, তাই মোহাম্মদ ও তার অনুসারীরা জোর গলায় আওয়াজ তোলে- বাইবেলকে বিকৃত করা হয়েছে। যেমন কোরানে উল্লেখ আছে-

স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। কোরান, ২:১২৭

অথচ এটা কোরানে উল্লেখ পর্যন্তই সার। কোরানের পূর্ববর্তী কিতাব তৌরাত ও ইঞ্জিলে এ বিষয়ের কোন উল্লেখ নেই। এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই যে এটা ইব্রাহীম ও ইসমাইল তৈরী করেছিল যেখানে জেরুজালেমের আল আকসা উপাসনাগৃহ কবে তৈরী হয়েছিল তার কিছুটা ঐতিহাসিক প্রমান আছে। তা ছাড়া তৌরাতে তো এর পূরা মাপ জোকের বর্ননাও দেয়া আছে আর বলা আছে কে তৈরী করেছিল, খোদ কোরানও তার সাক্ষ্য দেয়। কোরান কেন তার সাক্ষ্য দেয়? কারন এটা ছিল মোহাম্মদের একটা কৌশল যাতে ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে দেখানো যায় যে ইসলাম ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মেরই শেষ সংস্করন। ইসলাম তো আরও অগ্রসর হয়ে বলে- কাবা হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম তৈরী ঘর যা আদম কর্তৃক তৈরী হয়েছিল। যেমন-

আবু দার বর্নিত- আমি বললাম, ও আল্লাহর রসুল, কোন্ মসজিদ সর্বপ্রথম তৈরী হয়েছিল? তিনি বললেন- মসজিদুল হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এর পর কোন্ টা ? তিনি উত্তর দিলেন- মসজিদুল আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এদের মধ্যে কত সময় ব্যবধান ছিল ? তিনি উত্তর দিলেন- চল্লিশ বছর।বুখারী, বই-৫৫, হাদিস-৬৩৬

উল্লেখ্য, এটা কিন্তু সম্পূর্নতই মোহাম্মদের নিজের কথা, এর পিছনে কোন রকম ঐতিহাসিক তথ্য প্রমান নেই। মসজিদুল আকসা বা সলোমনের মন্দির কবে কখন তৈরী হয়েছিল তার কিছু কিছু ঐতিহাসিক তথ্য প্রমান আছে কিন্তু কবে কাবা ঘর তৈরী হয়েছিল তার তেমন কোন ঐতিহাসিক তথ্য নেই, যা কিছু তথ্য তা মোহাম্মদ বর্নিত।তবে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না।আরবের সর্বত্র ইসলামী রাজত্ব কায়েম হলে সকল ইতিহাসই ধ্বংস করা হয়েছে কিন্তু নানা ভাবে কিছু কিছু ইতিহাস তো পাওয়া যাবেই চেষ্টা করলে। যাহোক, কাবা সৃষ্টির ইসলামিক তত্ত্বটা কি? সেটা হলো- আল্লাহই সর্বপ্রথম কাবা মসজিদ তৈরী করে, তারপর নুহের আমলে মহাপ্লাবনে তা ধ্বংস হয়ে গেলে পূনরায় ইব্রাহীম কর্তৃক নির্মিত হয়, যার কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই, আছে কেবল পৌরাণিক কাহিনী আকারে।যদি কোন ইসলামিক সোর্স থেকে কাবা ঘর তৈরীর ইতিহাস জানতে চাওয়া হয়- সেখানে একটাই বক্তব্য থাকে তা হলো-কোরানে আল্লাহ ইব্রাহীমকে কাবা ঘর নির্মান করতে বলেছে, তাই ইব্রাহীম ও তার পূত্র ইসলাম দুজনে মিলে তা তৈরী করেছে। আর যে টুকু প্রামান্য ইতিহাস পাওয়া যায় তা সবই মোহাম্মদের মক্কা দখলের পর। একজন মুমিন বান্দা মাত্রেই এটুকুতে সন্তুষ্ট ও আর কিছু জানার দরকার বোধ সে করে না। এখন যেহেতু কোরান কোন ইতিহাসের কিতাব নয়, তাই নিরপেক্ষ পাঠক মাত্রই জানতে চাইবে নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক সূত্র থেকে কাবা ঘর নির্মানের উৎসটা কি। আর তখন যা জানা যায় , তার সাথে দু:খজনক ভাবে কোরান বর্নিত কোন কাহিনীর মিল নেই। যে সব কাহিনী জানা যায় তা ইতোপূর্বে ব্যখ্যা করা হয়েছে আর তা হলো – আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত যে পৌত্তলিক ধর্ম যার প্রধান দেবতা ছিল চন্দ্র, তারই মন্দির ছিল কাবা আর এটা তৈরী হয়েছিল আনুমানিক খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে।বিভিন্ন উৎস হতে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, আনুমানিক ২০০০ খৃষ্টপূর্বে তথাকথিত নবী ইব্রাহিম দুনিয়াতে ছিল, আর খৃষ্টপূর্ব ১০০০ এর দিকে ছিল রাজা সলোমন। রাজা সলোমনই প্রথম তৈরী করে সলোমনের মন্দির তথা মসজিদুল আকসা (এ নাম মুসলমানদের দেয়া)। তার মানে ইব্রাহীম যদি কাবা ঘর নির্মান করেও থাকে তাহলে কাবা ঘর ও মসজিদুল আকসা এ দুইয়ের নির্মান কালের তফাৎ কমবেশী ১০০০ বছর, কোন ক্রমেই ৪০ বছর নয়। অথচ কি আজব কথা, একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করা মাত্রই কি নির্বিকারভাবে মোহাম্মদ তার মনগড়া তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন।আর গোটা মুসলমান সমাজ কোন রকম বাছ বিচার ছাড়াই,পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই সেটাই বিশ্বাস করছে।কারন সেটা মোহাম্মদ বলেছেন।আর যদি আদমকে কাবা ঘরের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ধরা হয় যা মোহাম্মদ বিশ্বাস করতেন ও বর্তমানকার মুমীন বান্দারা বিশ্বাস করে, তাহলে তো মসজিদুল আকসার সাথে বয়সের তফাৎ হয় হাজার হাজার বছর। ভৌগলিক অবস্থাকে বিচার করলেও স্পষ্ট বোঝা যায় ইব্রাহীম কখনই মক্কায় যায় নি বা তার কথিত স্ত্রী হাজেরা ও তার সন্তান ইসমাইলকে মক্কায় নির্বাসন দেয় নি। ইব্রাহীমের বিচরন স্থল ছিল জেরুজালেম, জর্ডন, সিরিয়া, গাজা, মিশর এসব অঞ্চলে। এর যে কোন স্থান থেকে সোজা মক্কা পর্যন্ত বিমান উড্ডয়ন দুরত্ব কমপক্ষে ১০০০ কিলোমিটার। মরুপথে এ দুরত্ব আরো বেশী।ইব্রাহীম হাজেরা ও তার শিশু পূত্র ইসমাইলকে এতদুরের মরুভূমির কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে মক্কায় রেখে যাবে যা বিশ্বাস করা একমাত্র নির্বোধ মানুষের পক্ষেই সম্ভব। নির্বাসন যদি দিতেই হয়, বড়জোর ২০০/৩০০ কিলোমিটার দুরেই সেটা সেই তৎকালে দেয়াটাই সঙ্গত। কারন সে যুগে সেই ২০০/৩০০ কিলোমিটারই ছিল অনেক বড় দুরত্ব।হাজেরা কখনো এ দুরত্ব বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে পুনরায় ইব্রাহীমের কাছে যেতে পারত না। বিষয়টি ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য নিচের মানচিত্র দেয়া হলো। আরব দেশের মানচিত্র দেখলেই বোঝা যাবে, হাজেরা ও ইসমাইলকে নির্বাসন দেয়ার কিচ্ছা কতটা অসার ও ভিত্তিহীন।

আগেই বলা হয়েছে- মুসলমানরা প্রাক ইসলামী যুগের কোন ইতিহাস সংরক্ষন করে নি। তাই কাবা ঘর কখন প্রতিষ্ঠিত হয় বা তার প্রতিষ্ঠাতা কে তা জানতে আমাদেরকে অবশ্যই অমুসলিম উৎসের দ্বারস্থ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বে দেখা যায় Alfred Guillaume এর একটা ব্যপক গ্রহনযোগ্যতা আছে।কারন ইনি মাঝে মাঝে এমন সব বক্তব্য দিয়েছেন যা ইসলামের পক্ষে যায়।আসলে উনি নিরপেক্ষভাবে কথা বলেছেন, কারও পক্ষ বা বিপক্ষ চিন্তা করে কিছু বলেন নি। তো তিনি কি বলেছেন একটু দেখা যাক-‘”… there is no historical evidence for the assertion that Abraham or Ishmael was ever in Mecca, and if there had been such a tradition it would have to be explained how all memory of the Old Semitic name Ishmael (which was not in its true Arabian form in Arabian inscriptions and written correctly with an initial consonant Y) came to be lost. The form in the Quran is taken either from Greek or Syriac sources.” (Alfred Guillaume, Islam [Penguin Books Inc., Baltimore, 1956], pp. 61-62). তো স্পষ্ট তিনি নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলছেন যে এমন কোন নজীর নেই যে ইব্রাহীম বা ইসমাইল কখনো মক্কাতে গমন করেছিল। তার অর্থ ইব্রাহীম ও ইসমাইল কাবা ঘর তৈরীও করেনি। আমি নিশ্চিত মুসলিম পন্ডিত ও মুমিন বান্দারা Guillaume এর অন্যান্য অনেক রেফারেন্সকে অকাট্য হিসাবে গ্রহন করলেও এ রেফারেন্স একেবারেই গ্রহন করবে না , বলবে এটা বিকৃত বক্তব্য বা তিনি কি সবজান্তা নাকি , এ প্রশ্নও কেউ কেউ করতে পারে। আর এটাই সমস্যা। যা ইসলামের পক্ষে যায় না , তার পক্ষে অকাট্য যুক্তি প্রমান থাকলেও তা তাদের কাছে বিকৃত। মুমিন বান্দা মাত্রই মোহাম্মদকে সবজান্তা সর্বজ্ঞানী মনে করে যদিও তিনি জানতেন না সূর্য অস্ত গেলে কোথায় যায়, দিন ও রাত কেন ঘটে, জানতেন না পৃথিবী গোলাকার নাকি সমতল, কে শয়তান আর কে জিব্রাইল চিনতে পারতেন না, জানতেন না রাতের আকাশে তারগুলো আসলে কি বা উল্কাখন্ডের প্রকৃতি কি এবং আরও অনেক কিছুই জানতেন না।তবুও সবাই তাকে সবজান্তা মনে করে, মোহাম্মদ তার অনুসারীদের মাথাটা এমন ভাবেই নষ্ট করে দিয়ে গেছেন সেই চৌদ্দশ বছর আগে।ভাবতে আশ্চর্য লাগে, সেই সব মানুষগুলো পড়েও দেখার চেষ্টা করে না তাদের কিতাবে মহা জ্ঞানের কথা নাকি বোগাস কথা বার্তা লেখা আছে।

কথিত আছে আদম দুনিয়াতে অবতরণ করার পর আল্লাহ তাকে একটা মসজিদ করার জন্য আদেশ করেন আর আদম এ বিরাট দুনিয়ার আর কোথাও জায়গা না পেয়ে উষর ও কঠিন মরুভুমি মক্কাতে সেই মসজিদ বানায় যাকে বলা হয় কাবা। প্রথম প্রশ্ন জাগে- দুনিয়ায় এত ভাল ভাল সুজলা শস্য শ্যামলা জায়গা থাকতে আদম মক্কার মত একটা কঠিন যায়গাতে মসজিদ বানাতে গেল কেন? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত সুজলা সুফলা দেশ একটা উত্তম জায়গা হতে পারত বসবাসের জন্য। দ্বিতীয়ত: হাদিস থেকেই জানা যায়- ইব্রাহিম তার পূত্র ইসমাইল ও তার মা হাজেরাকে যখন মক্কাতে নির্বাসন দিয়ে যায় তখন সেখানে কোন পানির উৎস ছিল না। রুক্ষ শুষ্ক কঠিন উষর যায়গা ছিল সেটা।জিব্রাইলের পায়ের ধাক্কা বা ইসমাইলের পায়ের ধাক্কাতেই জমজম কুপ সৃষ্টি হয় যা ছিল তখনকার মক্কার একমাত্র পানির উৎস। তো আদম যখন সেখানে মসজিদ নির্মান করে, তখন তো সেখানে পানি ছিল না।তাই এরকম একটা যায়গায় যেখানে বাস করার মত পরিবেশও ছিল না, কারন পানি ছাড়া তো আর বাঁচা যায় না, অথচ সেখানে মসজিদ নির্মান করার অর্থই হলো সেখানে আদম তার স্ত্রী হাওয়াকে নিয়ে বসবাস করত। প্রশ্ন হলো- যেখানে বাঁচার মত পরিবেশ ছিল না , সেখানে আদম একটা মসজিদ তৈরী করে বসবাস করছে, এটা কতটা বাস্তব সম্মত? তৃতীয়ত: কাবা ঘর নাকি পৃথিবীর কেন্দ্র স্থলে অবস্থিত। আবার কাবা ঘরের ঠিক সোজা উপরে নাকি ৭ম তথা শেষ বেহেস্তের বায়তুল মামুর অবস্থিত যেখানে প্রতি নিয়ত ৭০,০০০ ফিরিস্তা আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে। পৃথিবী যেহেতু গোল তাই এর পৃষ্ঠদেশের যে কোন বিন্দুকেই পৃথিবীর কেন্দ্র ধরা যায়, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। কিন্তু পৃথিবী প্রতিদিন নিজ অক্ষের ওপর একবার করে পাক খাচ্ছে, ও ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে আসছে যার ফলে দিন ও রাত হয়। তার মানে প্রতি নিয়ত পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত কাবা ঘরের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটছে কিন্ত তার সোজা উপরের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকছে। এর ফলে প্রতি নিয়ত ৭ম বেহেস্ত তার বাকী ৬ টি বেহেস্ত সহ পৃথিবীর অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেরাও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে কি?আরো সোজা কথায়, পৃথিবী ঘোরার সাথে সাথে বায়তুল মামুর সহ সকল বেহেস্তেই কি ঘুরতে থাকে চরকির মত? তাছাড়া ৩৬৫ দিনে পৃথিবী তো সুর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসে, তার ফলে আহ্নিক ও বার্ষিক গতি মিলিয়ে পৃথিবীর গতি, তার অবস্থান ও তার পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত কাবা ঘরের অবস্থান মহাবিশ্ব সাপেক্ষে খুব জটিল হয়ে পড়ে। এর সাথে কিভাবে ৭ম বেহেস্তের বায়তুল মামুর তাল মিলিয়ে তার অবস্থান ঠিক রাখে? এ রকম উদ্ভট ধারণার মূল কারনই হলো মোহাম্মদ পৃথিবীকে স্থির ভাবতেন, তিনি কল্পনাই করতে পারেন নি যে পৃথিবী বন বন করে ঘুরছে। বোধ হয়, পৃথিবীর এ বন বন করে ঘোরার কারনেই মুমিন বান্দাদের মাথাটাও সব সময় একটা ঘোরের মধ্যে থাকে আর সে কারনেই তাদের মাথায় অন্য কিছু প্রবেশ করতে পারে না।

মক্কার কাবা ঘর যে দুনিয়াতে আল্লাহর প্রথম ঘর ছিল না আর তার কথিত আল্লা যে বাইবেলের আল্লাহ ছিল না, তার সবচাইতে বড় প্রমান হলো ৪০ বছর বয়সে মোহাম্মদ নবুয়তি পাওয়ার পরও তিনি যেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দস এর দিকে মূখ করে ইবাদত তথা নামাজ পড়তেন। কাবা ঘরই যদি আল্লাহর প্রথম ও আসল ঘর হতো তাহলে নবুয়তির দিনই জিব্রাইল তাকে সেটা বলে যেত। তখন তো বলেই নি, বরং দেখা যাচ্ছে, মোহাম্মদ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মক্কাতে ইসলাম প্রচার করার সময়ও জিব্রাইল সেটা বলতে ভুলে গেছে বা আল্লাহও তাকে বলে নি। এমন কি বোরাক নামক পাখা বিশিষ্ট গাধায় চড়ে সাত আসমান পার হয়ে আল্লাহর সাথে দেখা করার সময়ও আল্লাহ তাকে সেটা জানাতে ভুলে গেছে।অথচ আল্লাহ তাকে ৫ বার নামাজ পড়ার কথা বলেছে কিন্তু বলেনি কোন দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে হবে। শুধু কি এখানেই শেষ? এর পর মক্কাতে মোহাম্মদ সুবিধা করতে না পেরে দলবল সহ মদিনায় গমন করলেন এবং সেখানেও দেড় বছরের বেশী কাল অতিক্রম করলেন কিন্তু আল্লাহ তারপরও তাকে জানায়নি কোন দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে হবে।তখনও মোহাম্মদ ও তার দলবল বায়তুল মোকাদ্দসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে চলেছেন। অত:পর আসল সেই আয়াত যার মাধ্যমে আল্লাহ বলে পাঠাল যে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে হবে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, কাবা ঘর বাইবেলে কথিত আল্লাহর প্রথম ঘর তো নয়ই , এমনকি আল্লাহর ঘরই নয়। বিষয়টি এখানে শেষ হলে ভাল হতো কিন্তু না এখানেই শেষ নয়। মদিনায় যাওয়ার দেড় বছর পর যখন মোহাম্মদ কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া শুরু করলেন, তখন কাবা ঘরের মধ্যে সেই আল্লাহ তথা চন্দ্র দেবতা সহ ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। তার মানে তিনি কুরাইশদের আল্লাহ ও তার সঙ্গী দেব দেবীদের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন, আর তাতে তার কোন অসুবিধা হতো না। এভাবেই তিনি মদিনায় যে পরে আরও সাড়ে আট বছর ছিলেন, কাবার ভিতরের মূর্তিগুলোর দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে গেছেন। এতে অসুবিধা না হওয়ার কারন কাবার মধ্যে যে আল্লাহ নামক প্রধান দেবতা ছিল সে তো মোহাম্মদেরই আল্লাহ। তার শুধু দরকার পড়েছিল ইহুদী খৃষ্টানদেরকে বোকা বানানো আর তাই তিনি প্রধান দেবতা বাদে কোন দেব দেবীকে স্বীকার করতে রাজী ছিলেন না।কারন ইহুদী ও খৃষ্টানরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন দেব দেবীতে বিশ্বাসী ছিল না। আর তাদের এ ধর্ম বিশ্বাসের সাথে মিল রাখতে গিয়েই এ কায়দাটা প্রয়োগ করেন। মুলত: ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্যই এতকাল তিনি যেরুজালেমের দিকে মুখ করে নামাজ পড়েছিলেন। কিন্তু যখন দেখা গেল ইহুদী ও খৃষ্টানরা ইসলাম কবুল করবে না , তখনই মোহাম্মদ সিদ্ধান্ত নিলেন কিবলার দিক পরিবর্তনের। আর এ সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে সাথেই আয়াত নাজিল হয়ে গেল। কি সেই আয়াত?

এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চিতই এটা কঠোরতর বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়। সূরা বাক্কারা, আয়াত-১৪৪, মদিনায় অবতীর্ণ।

আর যে স্থান থেকে তুমি বের হও, নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও-নিঃসন্দেহে এটাই হলো তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাস্তব সত্য। বস্তুতঃ তোমার পালনকর্তা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবহিত নন। সূরা- বাক্কারা, আয়াত-১৫০, মদিনায় অবতীর্ণ।
কখন এ আয়াত নাজিল হয়?
আল বারা বর্নিত- নবী বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে ষোল বা সতের মাস নামাজ পড়তেন কিন্তু তিনি ইচ্ছা করতেন মক্কার কাবা ঘর হবে কিবলা। তাই আল্লাহ উক্ত ০২: ১৪৪ আয়াত নাজিল করলেন এবং তিনি কতিপয় সাহাবী সহ আসরের নামাজ পড়লেন কাবার দিকে মুখ করে। সহি বুখারি, বই – ৬০, হাদিস-১৩
কি সুন্দর সহজ সরল স্বীকারোক্তি।মোহাম্মদ চাইতেন কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে অর্থাৎ কুরাইশদের আল্লাহর ঘরকেই তিনি কিবলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখতেন সব সময় কিন্তু শুধুমাত্র ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে দলে টানার জন্যই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মোহাম্মদ তার কুরাইশ বংশের পছন্দনীয় আল্লাহর পথেই ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে আনতে চাইতেন কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত আসল না। অগত্যা তাকে তাদের আশা ত্যাগ করতে হলো ও নিজের বহুদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে উদ্যোগী হলেন। অবশ্য তাতে কিছু অসুবিধাও নেই। ততদিনে মদিনাতে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন, মদিনার পাশ দিয়ে যাওয়া বানিজ্য কাফেলা আক্রমন করে ধন সম্পদ লুটপাট করা যাচ্ছে, লুটের ভাগ পাওয়ার জন্য মদিনাবাসীরাও তার পিছনে সব কাতার বন্দী হয়ে পড়ছে। তাই ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে অতটা দরকার তার আর নেই কারন ক্ষমতা হাতে পাওয়া গেছে আর তা পুঞ্জিভুত করে ঠিক মতো চালাতে পারলে পরে ইহুদী খৃষ্টানদেরকে জোর করে মুসলমান বানানো যাবে, না হলে তাদেরকে চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়া যাবে, বা মক্কা মদিনা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া যাবে।আর বাস্তবেও আমরা সেটা খোদ মোহাম্মদের জীবনেই দেখেছি, যা তার সাহাবীরা পরবর্তীতে নিষ্ঠা সহকারে অনুসরণ করে এসেছে আর বর্তমানে এ একবিংশ শতাব্দীতেও বাস্তবায়ণ করার তালে আছে।