বইটা যখন প্রকাশিত হল, তখন ২০১২ সালের বইমেলার শেষ লগ্ন। এর কয়েকদিন পরেই আমি বাংলাদেশের পাঠ চুকিয়ে চলে আসি। এর মধ্যেও যে ক’টা দিন মেলায় ছিলাম দেখেছি বইটি পাঠকদের একাংশের কাছে চাহিদা  তৈরি করে। অনেকেই বইটি কেনার জন্যই মেলায় এসেছেন,  মানুষ জনের  ভীড় ভাট্টা সামলে বইটি সংগ্রহ করেছেন। সামান্য লেখক দিসেবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া এই অধমের আর কিছুই করণীয় ছিলো না। আমার বইয়ের পাঠকদের প্রতি রইলো আমার অবিরাম ভালবাসা।
:line:

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যখন তার গানে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সখি, ভালবাসা কারে কয়?’ তখন কি তিনি একটি বারের জন্যও ভাবতে পেরেছিলেন, এর উত্তর লুকিয়ে আছে তার সমসাময়িক একজন শখের প্রকৃতিবিদের গবেষণার মাঝে?[1] হ্যা, প্রেম ভালবাসা, রাগ, অভিমান, ঈর্ষা কিংবা সৌন্দর্যের অস্তিত্ব ব্যাখ্যার জন্য সবচেয়ে আধুনিক তত্ত্বগুলোর জন্য আমরা যার কাছে ঋণী, তিনি  প্রেম-পিরীতি বা মান অভিমান নিয়ে গবেষণা করা কোন কেউকেটা দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী বা আর্ট কালচারের বিশাল বোদ্ধা বা পোস্টমডার্নিস্ট সমালোচক নন, তিনি  ছিলেন  এক নিবিড় প্রকৃতিপ্রেমিক, যিনি বিশাল আকারের পারিবারিক বাগানে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকতেন- চরম আগ্রহ আর পরম বিস্ময় নিয়ে অবলোকন করতেন যত রাজ্যের ফুল,পাখি, ছোট বড় উদ্ভিদ আর পোকামাকড়,  যত্ন করে পালতেন গুবরে পোকা, কেঁচো আর কবুতর।   তিনি চার্লস ডারউইন।

বলতে দ্বিধা নেই, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান আর দর্শনের টুকিটাকি বিষয় আমার আগ্রহের এবং লেখালিখির কেন্দ্রবিন্দু হলেও আমি বহুদিন ধরেই চার্লস ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের বিশেষ করে যৌনতার নির্বাচনের এক বিশাল অনুরাগী পাঠক।  ডারউইন এবং তার আবিস্কৃত বিবর্তন তত্ত্বের প্রতি আমার এ অনুরাগ এক দিনে জন্মেনি, গড়ে উঠেছে পলে পলে একটু একটু করে।  আর এ অনুরাগ কেবল আমার একার নয়, আমার মত এই জামানার বিজ্ঞান লেখকদের অনেকরই। এর কারণ অজানা নয়। পৃথিবীতে খুব কম বৈজ্ঞানিক ধারণাই কিন্তু জনসাধারণের মানসপটে স্থায়ীভাবে বিপ্লব ঘটাতে পেরেছে। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব একটি বিপ্লবী তত্ত্ব,ঠিক তেমনি জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ডারউইন আর রাসেল ওয়ালেস প্রস্তাবিত বিবর্তনতত্ত্ব। এই তত্ত্বই আমাদের শিখিয়েছে যে, কোন প্রজাতিই চিরন্তন বা স্থির নয়, বরং আদিম এক কোষী প্রাণী থেকে শুরু করে এক প্রজাতি থেকে পরিবর্তিত হতে হতে আরেক প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে, আর পৃথিবীর সব প্রাণীই আসলে কোটি কোটি বছর ধরে তাদের পুর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হতে হতে এখানে এসে পৌঁছেছে। ডারউইন শুধু এ ধরনের একটি বিপ্লবাত্মক ধারণা প্রস্তাব করেই ক্ষান্ত হননি, বিবর্তনের এই প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কিভাবে কাজ করে তার পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন সবিস্তারে, প্রথমবারের মত ১৮৫৯ সালে ‘প্রজাতির উদ্ভব’ বা ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’ বইয়ে। খুব অবাক হতে হয় এই ভেবে, যে সময়টাতে সৃষ্টি রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে প্রায় সকল বিজ্ঞানী আর দার্শনিকই সবে ধন নীল-মনি ওই বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায়ে মুখ থুবরে পড়ে ছিলেন আর বাইবেলীয় গণনায় ভেবে নিয়েছিলেন পৃথিবীর বয়স সর্বসাকুল্যে মাত্র ৬০০০ বছর আর মানুষ হচ্ছে বিধাতার এক ‘বিশেষ সৃষ্টি’, সে সময়টাতে জন্ম নিয়েও ডারউইনের মাথা থেকে এমনি একটি যুগান্তকারী ধারণা বেরিয়ে এসেছিলো যা শুধু বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকেই তরান্বিত করেনি, সেই সাথে চাবুক হেনেছিলো আমাদের ঘারে সিন্দাবাদের ভুতের মত সওয়ার হওয়া সমস্ত ধর্মীয় সংস্কারের বুকে। দার্শনিক ডেনিয়েল ডেনেট বিবর্তনতত্ত্বকে ‘ইউনিভার্সাল এসিড’ বা রাজাম্ল  হিসেবে চহ্নিত করেছেন। ইউনিভার্সাল এসিড যেমন তার বিধ্বংসী ক্ষমতায় সকল পদার্থকে পুড়িয়ে-গলিয়ে ছারখার করে দিতে পারে, তেমনি ডারউইনের বিবর্তনবাদী তত্ত্ব সমস্ত প্রথাগত ধর্মীয় ধ্যান ধারণা আর কুসংস্কারকে একেবারে দুর করে দিতে পারে। ‘ডারউইনের বুলডগ’ বলে কথিত বিজ্ঞানী টি এইচ হাক্সলি ডারউইনের ‘প্রজাতির উদ্ভব’ বইটিকে নিউটনের ‘প্রিন্সিপিয়ার’ পর জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ‘মহাস্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন; আবার সেই সাথে আবার দুঃখও করেছিলেন এই ভেবে – ‘এতোই নির্বোধ আমি যে এত সহজ ব্যাপারটা আগে আমার মাথায় আসেনি।’ বিজ্ঞানী আর্নেস্ট মায়ার বলেছেন, ‘ডারউইনিয়ীয় বিপ্লব যে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারণা – এটি যে কারো পক্ষে খন্ডন করা কঠিনই হবে।’ জীববিজ্ঞানী স্টিফেন জে গুল্ড মনে করতেন তাবৎ পশ্চিমা বিশ্বের আধা ডজন বাছা বাছা তত্ত্বের মধ্যে ডারউইনের তত্ত্ব থাকবে শীর্ষস্থানে। আর অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স তো মনেই করেন যে, শুধু পৃথিবী নয় সমগ্র মহাবিশ্বে কোথাও প্রাণের বিকাশ ঘটলে তা হয়ত ডারউইনীয় পদ্ধতিতেই ঘটবে, কারণ ডারউইনীয় বিবর্তন সম্ভবতঃ একটি ‘সার্বজনীন সত্য’।  সমগ্র মহাবিশ্বের প্রেক্ষাপটে ‘সার্বজনীন সত্য’ কিনা তা এখনো প্রমাণিত না হলেও স্বীকার করে নিতেই হবে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব আর এর নান্দনিক বিকাশকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের চেয়ে ভাল কোন তত্ত্ব এ মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই।  শুধু পশ্চিমা বিশ্বের বিজ্ঞানীরাই নন, আমি যেখানে লেখালিখি করি সেই মুক্তমনা ব্লগের একটা বড় অংশ আজ অধিকার করে থাকে বিবর্তন সংক্রান্ত নানা রকমারী প্রবন্ধ। অপার্থিব, শিক্ষানবিস, সংশপ্তক, পৃথ্বী, রায়হান আবীর, নীল রোদ্দুর, রিয়াজউদ্দীন, ব্লাডি সিভিলিয়ান, সিদ্ধার্থ, কাজী মাহবুব হাসান, আন্দালিব, রূপম, অনন্ত বিজয় দাশ, স্বাধীন, সৈকত চৌধুরী, জাহিদ রাসেল সহ অনেকেই বিবর্তনের উপর নানা মানসম্মত লেখা দিয়ে আমাদের সাইটকে ধন্য করছেন প্রায় প্রতিদিনই[2]। এর পাশাপাশি বেশ কিছু ভাল বই-ও লেখা হয়েছে বিগত কয়েক বছরে[3]। আমার জীবনসঙ্গিনী বন্যা আহমেদ তার বহুল প্রচারিত ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বইটি লেখার সময় বইয়ের একদম প্রথমেই একটি উক্তি ব্যবহার করেছিলো[4]।  উক্তিটি প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী ও বংশগতিবিদ থিওডসিয়াস ডবঝানস্কির –

‘বিবর্তনের আলোকে না দেখলে জীববিজ্ঞানের কোন কিছুরই আর অর্থ থাকে না’।

বিজ্ঞানী ডবঝানস্কি উক্তিটি করেছিলেন মূলতঃ  জীবজগতকে সামনে রেখেই। এটি নিঃসন্দেহ -বিবর্তনের আলোকে না দেখতে পারলে সত্যই জীবজগতকে বোঝা  আর ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।  ডবঝানস্কি এই মহামূল্যবান কথাটা বলেছিলেন তার ১৯৭৩ সালে লেখা একটি গবেষণাপত্রের শিরোনামে। ডবঝানস্কি যে কথাটা আমাদের চারপাশের জীবজগতের জন্য সঠিক বলে মনে করেছিলেন, আমি তার প্রায় চল্লিশ বছর পরে আমার এ বইটি লিখতে গিয়ে দেখছি – সেটা মানব সমাজকে ব্যখ্যা করার জন্যও সমানভাবে কার্যকর।  সত্যি কথা বলতে কী – মানব সমাজের বিভিন্ন প্যাটার্ণ ব্যাখ্যা করতে গেলে বিবর্তনতত্ত্বকে আর বাইরে রেখে আমাদের পক্ষে এগুনো সম্ভব নয়। এতোদিন ধরে সমাজবিজ্ঞানী আর মনোবিজ্ঞানীরা বিবর্তনতত্ত্বকে বাইরে রেখে মানব সমাজের নানা  সামাজিক ব্যাখ্যা প্রতিব্যাখ্যা জাহির করে চলেছিলেন। তাদের ব্যাখ্যায় ডারউইনীয় বিশ্লেষণ অনুপস্থিত থাকায় সেগুলো  থেকে গেছে অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ নয়তো হয়ে উঠেছে বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে একেবারেই অপাংক্তেয়। সেই সমস্যাগুলোর অসঅম্পূর্ণ সমাধানের পূর্ণতা দিতে বিবর্তন তত্ত্ব কীভাবে অগ্রসর বিশ্লেষণ হাজির করতে পারে তার বেশ কিছু নমুনা হাজির করেছি আমার এ বইয়ে।

ডারউইনীয় বিশ্লেষণকে সমাজ ব্যাখ্যার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারটা হয়তো অনেকেই সহজে মেনে নেবেন না।  যদিও অন্য সকল প্রানীকে জীবজগতের অংশ হিসেবে মানতে তাদের আপত্তি নেই, এমনকি ডারউইনীয় বিবর্তনের প্রয়োগ ছাড়া যে পিঁপড়েদের সমাজ থেকে শুরু করে শিম্পাঞ্জিদের সমাজ পর্যন্ত কোন কিছুরই ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়- সেটিও অনেকেই মানেন, কিন্তু মানুষকে ডারউইনীয় বিশ্লেষণের বাইরে রাখতেই অনেকে পছন্দ করেন। হয়তো তারা ভাবেন, হাতি, গণ্ডার, শিম্পাঞ্জি কিংবা গরিলা – এসকল প্রানীরা যতই উন্নত হোক না কেন, তারা তো আর মানুষের মতো কবিতা লিখতে পারে না, পারেনা গলা ছেড়ে গান গেতে, কিংবা পারেনা স্থাপত্যকর্ম বা কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে পড়াশুনা করতে, তাই মানুষ বোধ হয় অন্য প্রাণীদের থেকে একেবারে আলাদা, অনন্য। এ থেকে তারা সিদ্ধান্ত টানেন যে, ডারউইনীয় বিশ্লেষণ মানব সমাজের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি আমার এ বইয়ে এই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গির দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছি। আমি দেখিয়েছি, অনন্য বৈশিষ্ট থাকাটা মানব সমাজে ডারউইনীয় বিশ্লেষণকে কখনোই বাতিল করে না। সব প্রাণীরই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার নিরিখে মনে হতে পারে যে তারা হয়তো অনন্য।  যেমন, বাদুড়ের আল্ট্রাসনিক বা অতিশব্দ তৈরি করে শিকার ধরার এবং পথ চলার ক্ষমতা আছে, যা অনেক প্রানীরই নেই। মৌমাছির আবার পোলারাইজড বা সমবর্তিত আলোতে দেখার বিরল ক্ষমতা আছে, যা আমাদের নেই।  এধরণের অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকার পরেও কেউ কিন্তু বলছে না যে বাদুড় বা মৌমাছিকে জীববিজ্ঞানের বাইরে রাখতে হবে।  তাহলে মানুষের ক্ষেত্রেই বা অযাচিত ব্যতিক্রম হবে কেন? আসলে আমরা অনেকে নিজেদের ‘আশরাফুল মাখলুকাৎ’ ভেবে নিয়ে অন্য প্রানীদের থেকে একেবারেই আলাদা ভেবে প্রবল আত্মতৃপ্তি অনুভব করি। এই অযাচিত আত্মতৃপ্তিই অনেক সময় যৌক্তিক চিন্তায়  বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হয়ে উঠে অচলায়তন বৈজ্ঞানিক ভাবনার বিকাশে। আমি এ বইয়ে জোরালো দাবী  উত্থাপন করে বলেছি – মানব সমাজের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট কিংবা জটিলতা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আমরা মানুষেরা শেষ পর্যন্ত জীবজগতেরই অংশ। মানব সমাজে  প্রেম, ভালবাসা, আত্মত্যাগ, ঘৃণা,সঙ্ঘাত, পরার্থপরায়ণতা, সৃজনশীলতা এমনকি নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের মত উপাদানগুলোও বিবর্তনের পথ ধরেই সৃষ্ট হয়েছে, কখনো প্রাকৃতিক নির্বাচনকে পুঁজি করে, কখনোবা যৌনতার নির্বাচনের কাঁধে ভর করে।

যৌনতা শুনলেই আমাদের অনেকের মাথায়  ফ্রয়েড চলে আসে। আসাটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক হলেও ভাবনাগুলো সব সময় সঠিক নয়। যৌনতার মাধ্যমে ফ্রয়েড একসময়  আমাদের মানসজগতের  কিছু ব্যাখ্যা দিতে উদ্যত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু ফ্রয়েডের যৌতার ব্যাখ্যা আর ডারউইনের যৌনতার নির্বাচন কিন্তু একই ইমারতে দাঁড়িয়ে নেই।  বরং, ফ্রয়েডের সাথে ডারউইনের ধারণা এবং তত্ত্বের পার্থক্য বিস্তর।  ফ্রয়েড তার ব্যাখ্যায় প্রানী জগতের বিবর্তন এবং নির্চানী প্রক্রিয়া গোনায় ধরেননি, অনেক ক্ষেত্রেই নিজের মনোমত ব্যাখ্যা হাজির করেছিলেন লিবিডো, অহম, শিশ্নাসূয়া খোজাগূঢেষা, ইদিপাস-ইলেক্ট্রা গূঢ়েষার নানা রসালো তত্ত্ব আর ধারণার মাধ্যমে – যার অনেকগুলোই আবার পরবর্তীতে অবৈজ্ঞানিক এবং বাতিল হিসেবে গন্য হয়েছিলো।  কিছু কিছু আবার পরিগণিত হয়েছিলো চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াশীল ধারণা হিসেবেও[5]।  ডারউইন বর্ণিত যৌনতার নির্বাচন কিন্তু ফ্রয়েডীয় এ সমস্ত কুসংস্কার থেকে একদমই আলাদা। ডারউইনের এ তত্ত্বের একটি বৈজ্ঞানিক ইতিহাস আছে, আছে তত্ত্বের স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ। ডারউইন প্রকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটা বিবর্তন নিয়ে নিশ্চিত হলেও প্রকৃতি জগত পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, প্রানী জগতে বেশ কিছু বৈশিষ্ট পাওয়া যাচ্ছে যা কেবল প্রাকৃতিক নির্বাচন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কারণ  এ বৈশিষ্টগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলশ্রুতিতে টিকে থাকার কথা নয়।  এগুলো টিকে আছে, কারণ এই বৈশিষ্টগুলো বিপরীত লিঙ্গের যৌনসঙ্গির  দ্বারা বংশপরম্পরায় দিনের পর দিন আদৃত হয়েছে বলেই।  একটি  চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে পুরুষ ময়ূরের দীর্ঘ পেখম ।  এমন নয় যে দীর্ঘ পেখম পুরুষ ময়ূরকে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে কোন বাড়তি উপযোগিতা দিয়েছিলো।  বরং দীর্ঘ পেখম স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যহতই করেছে পদে পদে। দীর্ঘ পেখম থাকলে দৌঁড়াতে অসুবিধা হয়, শিকারীদের হাতে মারা পড়ার সম্ভাবনাও থাকে বেশিমাত্রায়। কাজেই টিকে থাকার কথা বিবেচনা করলে দীর্ঘ পেখম ময়ূরের জন্য কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয়নি বিবর্তনের পথ পরিক্রমায়। তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাহায্যে ময়ূরের দীর্ঘ পেখমকে ব্যাখ্যা করা অসম্ভবই বলা যায়। তাহলে ময়ূরের দীর্ঘ পেখম তৈরি হবার পেছনে রহস্যটা কি? এখানেই চলে আসে যৌনতার নির্বাচনের ব্যাপারটি।  দীর্ঘ পেখম টিকে গেছে মূলতঃ  নারী ময়ূর বা ময়ূরীর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে।  এই বৈশিষ্ট স্রেফ অলঙ্কারিক। আসলে পুরুষ ময়ূরের লম্বা পেখমকে ভাল বংশাণুর নির্দেশক হিসেবে দেখত ময়ূরীরা। কাজেই দীর্ঘ পেখমের ঢেউ তোলা  সুশ্রী ময়ূরেরা যৌনসঙ্গি হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরেছিলো। এভাবেই দীর্ঘ পেখমের বৈশিষ্ট বংশপরম্পরায় টিকে থেকেছে। ঠিক একইভাবে কোকিলের সুরেলো গলা, বাবুই পাখির বাসা বানানোর ক্ষমতা,  ফ্রুট ফ্লাইয়ের নাচ, উইডোবার্ডের দীর্ঘ লেজ কিংবা হরিণের শিং -এগুলোও উদ্ভুত হয়েছে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নয়, বরং বিপরীতলিঙ্গের বিভিন্ন পছন্দ অপছন্দ তথা যৌনতার নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে।  আমি আমার এ বইয়ে দেখিয়েছি, ময়ূরের পেখমের মতই মানব সমাজেও অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে যেগুলো মোটা দাগে অর্নামেন্টাল বা অলঙ্কারিক। কবিতা লেখা, গান করা থেকে শুরু করে গল্প বলা, আড্ডা মারা, কৌতুক করা, ভাস্কর্য বানানো – প্রভৃতি হাজারো বৈশিষ্ট মানব সমাজে দেখা যায় যেগুলো বেঁচে থাকায় কোন বাড়তি উপাদান যোগ করেনি, কিন্তু এগুলো টিকে গেছে যৌন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে। ময়ূর দীর্ঘ পেখমের যাদুতে বিমোহিত করে সঙ্গিদের প্রলুব্ধ করে, হরিণ যেটা আবার করে থাকে তার বর্ণাঢ্য শিং এর যাদুতে।  একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, শুধু ময়ূর বা হরিণ নয়, মানব সমাজেও অলঙ্কারিক বৈশিষ্ট কিন্তু একেবারে কম নেই। বড় চুল রাখা, দামী সানগ্লাস পরা, কেতাদুরস্ত কাপড়ের ফ্যাশন করা থেকে শুরু করে দামী গাড়ি, বাড়ি, শিক্ষা, বাকচাতুর্য, প্রতিভা, নাচ, গান, বুদ্ধিমত্তা  সবকিছুই মানুষ কাজে লাগায় বিপরীত লিঙ্গকে  আকর্ষণের কাজে। আসলে মানব সমাজের নারীপুরুষের বহু বৈশিষ্ট এবং অভিব্যক্তিই মোটাদাগে সম্ভবতঃ যৌনতার নির্বাচনের ফলাফল হিসেবেই উদ্ভুত -আশা করছি পাঠকেরা বহুভাবে এই সত্যের নিশানা খুঁজে পাবেন এই বইয়ে।

তানভীরুল আর রায়হান ছিলো ভালবাসা কারে কয় বইটার প্রথম ক্রেতা!  🙂

যৌনতার নির্বাচন এই বইটির বড় অংশ অধিকার করে থাকলেও সেটাই বইয়ের একমাত্র উপজীব্য নয়। বইটির মূল লক্ষ্য  ডারউইনীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবন, জগৎ এবং সমাজকে ব্যাখ্যার প্রচেষ্টা; আর সেই সাথে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন আধুনিক গবেষণার সাথে বাঙালি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। সাড়া বিশ্ব জুড়ে জন টুবি, লিডা কসমাইডস, স্টিভেন পিঙ্কার, রিচার্ড ডকিন্স, ডেভিড বাস, ম্যাট রিডলী, জিওফ্রি মিলার,  র‍্যান্ডি থর্ন হিল, রবার্ট টিভার্স, মার্গো উইলসন, সারাহ ব্ল্যাফার হার্ডি, হেলেন ফিশার, রবিন বেকার সহ বহু গবেষকদের বিবর্তন মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা গবেষণা আজ  বিজ্ঞানের অন্যতম আকর্ষনীয় এবং গবেষণার সজীব ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।  তাদের সেই কষ্টার্জিত আধুনিক গবেষণাগুলোকেই সহজ ভাষায় বাঙালি পাঠাকদের কাছে তুলে ধরার ঐকান্তিক প্রয়াস নিয়েছি আমি আমার এই বইয়ের মাধ্যমে।  এই বইয়ের  বেশ কিছু অংশ ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনা ব্লগে এবং কিছু কিছু মুক্তান্বেষা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো। পাঠকদের গঠনমূলক সমালোচনা এবং প্রাঞ্জল তর্ক বিতর্ক  নতুন জ্ঞানের দুয়ার উন্মোচন করেছিল।  আমি এক্ষেত্রে মুক্তমনায় সংশপ্তক, আল্লাচালাইনা, বিপ্লব পাল, ফরিদ আহমেদ, জওশন আরা, গীতা দাস, ইরতিশাদ আহমদ, অপার্থিব সহ বহু ব্লগারদের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। ফেসবুকেও পেয়েছি অসংখ্য মন্তব্য। আমার লেখাকে কেন্দ্র করে তাদের গঠমূলক আলোচনা আমার বইটিকে নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য করেছে বহু ক্ষেত্রেই। পাশাপাশি আমার জীবনসঙ্গিনী বন্যা আহমেদের তীক্ষ্ম সমালোচনাগুলোও আমার পাণ্ডুলিপির পরিবর্তন পরিবর্ধনে অবদান রেখেছে অনেক।  বন্যা নিজে বিবর্তনের অনুরাগী পাঠক এবং লেখক হওয়া সত্ত্বেও বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের বহু ধারণার ব্যাপারে নিরন্তর সংশয়ী শুধু নয়, তীব্র সমালোচকও।  তবে, এ ব্যাপারটা আমার জন্য যেন ‘শাপে বর’ হিসেবেই দেখা দিয়েছে।  আমার মনে আছে, যখন আমি বইটির বিভিন্ন অংশ লিখছিলাম, বহু ক্ষেত্রেই আমার লেখালেখি এমনকি নাওয়া খাওয়া সরিয়ে রেখে আর সাথে তর্কযুদ্ধে নামতে হয়েছে।  আমার চোদ্দ বছর বয়সী কন্যা তৃষা আমাদের এই তর্ক বিতর্ক দেখতে দেখতে হতাশ হয়ে বলেছে – ‘তোমরা এত অর্থহীন বিষয় নিয়ে এভাবে দিনের পর দিন ঝগড়া কর, যে অবাক লাগে’!  বন্যা আর আমি দু’জনই তখন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি – ‘আরে আমরা তো ঝগড়া করছি না, এটা এক ধরণের ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএগ্রিমেন্ট এণ্ড ডিস্কাশন’। তাতে অবশ্য আমার কন্যার অবাক হবার মাত্রা কমে না, আমরাই বরং শেষ পর্যন্ত তর্কে ক্ষান্ত দেই। যা হোক, লেখাগুলো শেষ পর্যন্ত বন্যার সংশয়ী দৃষ্টি পার হয়েই যেতে হয়েছে বলে এর মান নিয়ে আমার কোনই সন্দেহ নেই।  তারপরেও একটা বিষয় আমিও মাথায় রেখেছি। একেবারে প্রান্তিক গবেষণালব্ধ জিনিস গ্রন্থাকারে হাজির করলে একটা ভয় সবসময়ই থাকে যে, পরবর্তীতে অনেক কিছুই মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। তারপরও এই প্রান্তিক জ্ঞানগুলো আমাদের জন্য,এবং আমার বইয়ের পাঠকদের জন্য জরুরী বলে আমি মনে করেছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন পিঙ্কার তার  ‘মন কিভাবে কাজ করে?’ বইয়ের ভুমিকায় বলেছিলেন[6]

‘এই বইয়ের প্রতিটি ধারণা সময়ের সাথে সাথে ভুল প্রমাণিত হয়ে যেতে পারে।  কিন্তু সেটাই হবে আমাদের জন্য অগ্রগতি। কারণ পুরোন ধ্যান ধারণা গুলো এতোই নিরস যে ভুল হবারও যোগ্য নয়’।

আমিও সেকথাই বলার চেষ্টা করব। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন শাখা। নতুন জিনিস নিয়ে গবেষনার ক্ষেত্রে – এর কিছু প্রান্তিক অনুমান যদি ভুলও হয়, সেটাই হবে পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য প্রগতির সূচক। সে কথা মাথায় রেখেই আমার এ বইটি লেখা।

তবে, এই বইটি পড়া শুরু করার আগে একটি কথা আমি সবসময় পাঠকদের মনে রাখতে বলব। কোন কিছুর  বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ কিন্তু কোন কিছুর ‘জাস্টিফিকেশন’ বা বৈধতা দেয়ার চেষ্টা নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে দেখবার চেষ্টা করার ইচ্ছেটাই এখানে মূখ্য। আমরা যদি সংঘাত, লোভ, হিংসা কিংবা প্রতারণাবিহীন সমাজ সত্যই কামনা করি, তাহলে  আমাদের খুঁজে দেখতে হবে সমস্যার মূল ঠিক কোথায়। ব্যাপারগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝার চেষ্টা করতে হবে, কেবল -”এটা বিশ্বাসঘাতকতা”, “ওটা খারাপ” – এই ধরণের আপ্তবাক্য আউড়ে নয়। সমাজে যদি রোগ থাকে, তবে পদ্ধতিগতভাবে রোগের কারণের অনুসন্ধানটাই করতে হবে আগে। ডায়াবেটিস রোগী যখন তার রোগ সম্বন্ধে সচেতন হবে, তখনই সে সুচিকিৎসার দিকে যাবে, তার কোন রোগ নেই বলে চোখ বুজিয়ে রাখলে নয়। আন্তন চেখভের একটা চমৎকার উক্তি আছে এ প্রসঙ্গে , যেটি আমার খুব প্রিয়। এ উক্তিটি আমি বিবর্তন মনোবিজ্ঞান বিষয়ক লেখালিখির ক্ষেত্রে প্রায়ই ব্যবহার করি –

Man will become better when you show him what he is like.

আমার শেষ কটি বইয়ের প্রকাশক ছিলেন শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ টুটুল। তার হাতে বই তুলে দেওয়ার আলাদা আনন্দ আছে। ‘বিজয় অধ্যুষিত’ ছাপার বাজারে আহমেদুর রশীদ টুটুলই একমাত্র প্রকাশক যিনি অভ্রতে কম্পোজকৃত (ইউনিকোডে লেখা) পাণ্ডুলিপি অবলীলায় প্রকাশ করে চলেছেন।  ইমেইল, ফেসবুক এবং যোগাযোগের আধুনিক কারিগরী উপকরণগুলো তার নখদর্পনে থাকায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধগোলার্ধ দূরত্বে অবস্থান করেও তার সাথে যোগাযোগে কখনোই খুব একটা বেগ পেতে হয় না।  তার চেয়েও বড় কথা, আমি আমার বইয়ে ছাইপাশ যাই লিখি না কেন, টুটুলের মনোরম প্রচ্ছদ, বাঁধাই, ভাল কাগজ এবং যত্ন নিয়ে ছাপানোর  গুণে তার প্রকাশিত বইগুলো  হাতে নিলেই একধরণের আলাদা আনন্দ হয়, তৈরি করে অনাবিল মুগ্ধতা।  সেই মুগ্ধতাটুকুর রেশ এখনো না কাটায় এই বইটিও তার বিশ্বস্ত হাতেই তুলে দেয়া হল।  বইটি পাঠকদের ভাল লাগলে এর সামগ্রিক কৃতিত্বটুকু কার – লেখকের নাকি এই তরুণ প্রকাশকের এ ব্যাপারে আমি মোটেই নিশ্চিত নই।

অভিজিৎ রায়

আটলান্টা, জর্জিয়া

ইউ.এস.এ।

ইমেইল – [email protected]

ফেব্রুয়ারি, ২০১২।

:line:
তথ্যসূত্র:

[1] ১৮৮২ সালে চার্লস ডারউইন যখন মারা যান, তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স মাত্র একুশ বছর। রবীন্দ্রনাথ ডারউইনের কোন লেখা দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন – এ ধরণের কোন প্রমাণ আমরা পাই না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ‘সখি, ভালবাসা কারে কয়?’ সহ বিভিন্ন গানের বহু জটিল অভিব্যক্তি এবং প্রশ্নগুলোর সার্থক ব্যাখ্যা ধীরে ধীরে হাজির করতে শুরু করেছে বিবর্তন মনোবিজ্ঞান, যে শাখার ভিত্তি গড়ে উঠেছিলো বহু আগে রবীন্দ্রনাথেরই সমসাময়িক এক শখের প্রকৃতিবিদের হাত ধরে, নাম চার্লস রবার্ট ডারউইন।

[2] এ প্রসঙ্গে দেখুন মুক্তমনা ব্লগের বিবর্তন ক্যাটাগরি, মুক্তমনা

[3] এ প্রসঙ্গে দেখুন,

বন্যা আহমেদ, বিবর্তনের পথ ধরে, অবসর প্রকাশনী,২০০৭,পুনর্মূদ্রণ ২০০৮।

অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদ, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোজে, অবসর,২০০৭,পুনর্মূদ্রণ ২০০৮।

মনিরুল ইসলাম, দেড়শ’ বছরের দ্বন্দ্ব বিরোধ, সংহতি প্রকাশন, ২০০৭

সুশান্ত মজুমদার, চার্লস ডারউইন ও বিবর্তনবাদ, শৈব্যা প্রকাশন, ২০০৩

নারায়ন সেন, ডারউইন থেকে ডি. এন. এ, আনন্দ, ২০০৪

অনন্ত বিজয় দাশ (সম্পাদনা), ডারউইনঃ একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা ও ভাবনা, অবসর, ২০১১ প্রভৃতি গ্রন্থগুলো।

[4] বন্যা আহমেদ, বিবর্তনের পথ ধরে, অবসর প্রকাশনী,২০০৭,পুনর্মূদ্রণ ২০০৮।

[5] এ প্রসঙ্গে দেখুন হুমায়ুন আজাদ, নারী, আগামী প্রকাশনী, ষষ্ঠ মূদ্রণ ২০০২

[6] Steven Pinker, How the Mind Works, W. W. Norton & Company; Reissue edition, 2009

মুক্তমনায় কিছু প্রাসঙ্গিক লেখা:

ভ্যালেন্টাইন্স ডে : সখি ভালবাসা কারে কয়-১

সখি, ভালবাসা কারে কয় -২

সখি, ভালবাসা কারে কয়?-৩ : চুম্বুনের বিজ্ঞান

সখি, ভালবাসা কারে কয়? -৪ :  হীরার আংটি রহস্য

সখি, ভালবাসা কারে কয়? -৫ : প্রাসঙ্গিক রুমানা মঞ্জুর এপিসোড

সখি, ভালবাসা কারে কয়? শেষ পর্ব

নারী পরকীয়া :  একটি জৈববৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান

কেন ক্ষমতাশালী পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায়  আসক্ত হয়?

পুরুষ মানুষ দুই প্রকারের – জীবিত আর বিবাহিত

বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব -১

বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব -২

সহিংসতা, নির্যাতন এবং ‘লুল পুরুষ’ উপাখ্যান – একটি বিবর্তনীয় অনুসন্ধান

জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা -১

জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা -২

মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা -১

মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা -২

মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা -৩