সাম্প্রতিক দিন গুলোতে কৃত্রিম জীবন সৃষ্টির যুগান্তকারী ঘটনায় যে টাল মাটাল কান্ড হয়ে গেল, সে ডামাডোলে নিতান্তই সাদা মাটা ও সবার কাছে পরিচিত বিষয় ইসলামে নারীর মর্যাদা বিষয়ক পর্বের ৩য় অংশ প্রকাশ করতে দ্বিধা দ্বন্ধে ভুগছিলাম। যাহোক, আপাতত , ঝড়টা একটু থেমেছে তাই সাহস করে ৩য় পর্ব প্রকাশ করলাম। তবে খেয়াল করেছি সম্প্রতি বেশ কিছু শক্তিশালী লেখকের আবির্ভাব ঘটেছে যাদের লেখা অনেক তথ্য বহুল ও গতিশীল। আমি সবাইকে নিয়মিত লেখার আহ্বান জানিয়ে আমার আসল বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

নারীদেরকে কি বিপুল সম্মান ইসলাম প্রদান করে তার একটা বহুল পরিচিত ও বিখ্যাত আয়াত আছে যা সবাই জানেন, তারপরেও সেটাকে একটু ব্যখ্যা করতে হবে কারন সেটা জরুরী বলে মনে করি।

নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার রমনীকে বিবাহ কর। কিন্তু তোমরা যদি আশংকা কর যে, সমতা রক্ষা করতে পারবে না তদবস্থায় একই স্ত্রী কিংবা তোমাদের অধীনস্ত দাসী, ইহা অবিচার না হওয়ারই অতি নিকটতর। সূরা-৪: নিসা, আয়াত: ০৩

একজন পুরুষ একসাথে ৪ টা বিয়ে করতে পারবে, এর পরেও বলা হচ্ছে নারীদেরকে বিপুল সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। কেন চারটা বিয়ে করতে পারবে একজন পুরুষ? উদ্দেশ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। স্রেফ পুরুষটি যেন যৌন বৈচিত্র উপভোগ করতে পারে। খোদ নবী নিজে এক সাথে এক ডজনের বেশী স্ত্রী ও ততোধিক দাসী নিয়ে অবাধ যৌন ফুর্তি করতেন, আর তার উম্মতদেরকে যদি মাত্র একটি বিয়ে করতে বলেন তাহলে কেউ কি আর উম্মত থাকবে? সুতরাং ৪ টি বিয়ে করার অনুমতি দেয়ার সোজা অর্থ হলো- নারীকে স্রেফ যৌন ভোগ্য পন্য হিসাবে গণ্য করা।

এখন এ বিষয়ে জাকির নায়েক কি বলেন দেখা যাক। বলা বাহুল্য তার মজলিসে তাকে প্রায়ই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় আর সে খুব আত্মবিশ্বাস সহকারে এর উত্তর প্রদান করে। সেটা কেমন? সে শুরু করে ঠিক এভাবে- একমাত্র কোরানেই মানুষকে একটি মাত্র বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে। কারন যেহেতু একজন স্বামী তার চার স্ত্রীর সাথে সমতা রক্ষা করতে পারবে না তাই তার পক্ষে একটা ছাড়া দুইটি বিয়ে করা কার্যত অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে সে অন্যান্য ধর্মের কিচ্ছা কাহিনী তুলে ধরে। স্বয়ং আল্লাহর প্রেরিত ধর্মের সাথে যে অন্য ধর্মের কোন তুলনা হয় না তা তখন সে তখন বেমালুম ভুলে যান। তাছাড়া একথা একেবারেই ভুলে যান যে, ইসলাম একমাত্র ইসলামকে ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে সত্য ও আসল ধর্ম মনে করে না।

জাকির নায়েক মনে করে যে কোরান একমাত্র সে নিজেই পড়ে আর অন্য সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়। আর সে তো ভাল করেই জানে যে মুসলমানরা নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় আরবী সূরার দু একটি লাইন ছাড়া তাও আবার আরবীতে, আর কিছু মুখস্ত করা তো দুরের কথা পড়ারও প্রয়োজন মনে করে না। আর তাই তারা সবাই থাকে কোরান ও হাদিস সম্পর্কে একেবারে অন্ধকারে। সে কারনেই জাকির নায়েকদের মত লোকজন মানুষকে দিব্যি ধোকা দিয়ে চলেছে। কেমন করে ধোকা দিচ্ছে তা দেখা যাক নিম্মের আয়াতে-

তোমরা কখনো ভার্যাগনের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও লালায়িত হও, তবে সামগ্রিকভাবে ঝুকিয়া পড়িও না যে অপর স্ত্রীকে ঝুলানবৎ করিয়া রাখিবে এবং যদি সংশোধন কর এবং উভয়ে যদি পৃথক হইয়া যায়, তবে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাকারী দয়ালু। এবং যদি উভয়ে পৃথক হইয়া যায় তবে আল্লাহ আপন উদারতায় প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করিয়া দিবেন। সূরা-৪: নিসা, আয়াত:১২৯-১৩০

খেয়াল করুন, এখানে কিন্তু চারটা বিয়ে করার বিষয়টাকে একটা শর্ত সাপেক্ষে চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। কি সে শর্ত? এটা জানা কথা যে একজন পুরুষ মানুষের পক্ষে চারটা বৌকে সমান ভাবে দেখা সম্ভব না কারন কোন বৌ বেশী সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া যখন অন্য বৌ হলো কম সুন্দরী ও আকর্ষণহীনা, আর তাই শর্ত দেয়া হচ্ছে- তবে সামগ্রিকভাবে ঝুকিয়া পড়িও না। অর্থাৎ কোন একজনের প্রতি খুব বেশী ঝুকে না পড়লে চার বিবাহে কোন সমস্যা নাই। খুব বেশী ঝুকে পড়লেও তাড়াতাড়ি তা সংশোধন করে একটু কম ঝুকে পড়ার জন্য উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যদি সত্যি সত্যি কারও প্রতি বেশী ঝুকেই পড়ে তাহলে স্বামী প্রবরটি অন্যজনকে বিদায় করে দেবে অর্থাৎ কম সুন্দরীকে বিদায় নিতে হবে এখানে। আর বলা বাহুল্য সেই বিদায় তথা তালাক এর পুরো এক্তিয়ার কিন্তু স্বামী প্রবরের। এবারে আমরা উক্ত আয়াত সমূহকে পাশাপাশি রাখি-

নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার রমনীকে বিবাহ কর। কিন্তু তোমরা যদি আশংকা কর যে, সমতা রক্ষা করতে পারবে না তদবস্থায় একই স্ত্রী কিংবা তোমাদের অধীনস্ত দাসী, ইহা অবিচার না হওয়ারই অতি নিকটতর। সূরা-৪: নিসা, আয়াত: ০৩

তোমরা কখনো ভার্যাগনের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও লালায়িত হও, তবে সামগ্রিকভাবে ঝুকিয়া পড়িও না যে অপর স্ত্রীকে ঝুলানবৎ করিয়া রাখিবে এবং যদি সংশোধন কর এবং উভয়ে যদি পৃথক হইয়া যায়, তবে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাকারী দয়ালু। এবং যদি উভয়ে পৃথক হইয়া যায় তবে আল্লাহ আপন উদারতায় প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করিয়া দিবেন। সূরা-৪: নিসা, আয়াত:১২৯-১৩০

এখন কি মনে হচ্ছে? কোরান কি সত্যিই পুরুষের জন্য একটি মাত্র বিয়ে করার জন্য বলছে নাকি কৌশলে বহু বিবাহের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করছে ? পরিস্থিতি যখন এরকম তখনও জাকির নায়েকদের মত ধুরন্ধর লোকের কিন্তু যুক্তির অভাব নেই। তখন তার যুক্তি হলো- একজন পুরুষ বহু বিবাহ করলেও সমস্যা নেই, কিন্তু একজন নারী একসাথে বহু স্বামী রাখলে সমস্যা আছে। তা হলো- সেক্ষেত্রে সন্তান তার সঠিক পিতৃ পরিচয় পাবে না যা তাকে মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ফলে সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা আছে। তার মানে হচ্ছে- লোকটা ধরেই নিয়েছে যে আমরা যারা নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলি, আমরা চাই যেন একটা পুরুষ যেমন চারটি নারী বিয়ে করতে পারে, তেমনি একটা নারীও চারটি স্বামী বিয়ে করতে পারবে। আহাম্মকের চুড়ান্ত না হলে এ ধরনের অগ্রিম ধারনা কেউ করতে পারে ? আর একটা যুক্তি দাড় করায় তা হলো- কোন কারনে কোন স্থানে যুদ্ধ বিগ্রহ হলে পুরুষের সংখ্যা হঠাৎ করে কমে যেতে পারে সেক্ষেত্রে পুরুষের বহু বিবাহ যথার্থ। তার মানে অগ্রিম ধারনা করে নেয়া হচ্ছে যে মানুষ সব সময় যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকবে, নারীরা বিধবা হবে আর তাদেরকে বেচে থাকা অল্প সংখ্যক মানুষ গনহারে আবার বিয়ে করবে। ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগে মুসলমানরা সব সময়ই যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকত, তাই সে বিষয়টা তখনকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, তা আজকের দিনে কেন প্রযোজ্য হবে ? তখন আবার পাল্টা যুক্তি দেয়- দুই তিন বিয়ে করতে তো কেউ বাধ্য করছে না। এটা বস্তুত যে একটা উদ্ভট যুক্তি তা কিন্তু যুক্তিদাতারা বুঝতে পারে না। বহু বিয়ে করতে কেউ বাধ্য করছে না ঠিকই কিন্তু কোরানের মত ঐশি কিতাবের নামে চিরকালের জন্য যে বিধান দেয়া হলো তা তো রদ করা যাবে না , আর সেহেতু সেটাকে অপব্যবহার করে সমাজের রিপুতাড়িত লম্পট লোক গুলো একের পর এক বিয়ে করে, কিছুদিন রেখে দু তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়ে পরে পরিত্যগ করে চলে গেলে তাকে কিভাবে দমন করা যাবে? আর এটা তো কোন তাত্ত্বিক কথাও না।খোদ আমাদের এই বাংলাদেশে এরকম বহু কুলাঙ্গার ও লম্পট এ কর্মটি করে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে আর সমাজে অসহায় নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে যা সমাজকে একটা দুর্বিসহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের বাসায় বা পোশাক প্রস্তুতকারক কারখানাতে যে সব মহিলা কাজ করে তাদের অধিকাংশেরই জীবন ইতিহাস এরকম। ইসলাম কিন্তু এটা ঠেকানোর কোন উপায় রাখেনি। বরং লম্পটদের জন্য বিষয়টা খুবই সহজ করে দিয়েছে। আমাদের সোজা বক্তব্য ও দাবী- পুরুষ বা নারী তারা একই সময়ে শুধুমাত্র একজনের সাথেই বিবাহিত থাকবে উভয়ে পরিপুর্ন ও সমান অধিকার ও স্বাধীনতা সমেত। আর কিছু না। প্রাযুক্তিক অগ্রগতির এ দিনে যদিও সন্তানের আসল পিতা কে তা জানাটা অসম্ভব কিছু নয়, আমি ওদিকে আর গেলাম না। আর তার চাইতে বড় ব্যপার তথাকথিত এসব ইসলামী পন্ডিতদের সীমাহীন ভন্ডামী। খেয়াল করুন তারা শুরু করছে এই বলে যে একমাত্র ইসলাম পুরুষ মানুষকে একটি মাত্র বিয়ে করার জন্য বলেছে, কিন্তু কিছু পরেই সেই একই ব্যক্তি বহু বিবাহের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে চলেছে মহা উল্লাসে। এর পরেও শিক্ষিত মুসলমানরা তাদের মত ভন্ডদেরকে বাহবা দেয়, মাথায় তুলে নাচে, জ্ঞানের জগতে কতটা দীন হলেই সেটা সম্ভব সেটা আপনারাই বিচার করুন।

আর একটা বহু বিখ্যাত সুরার আয়াত আছে যা দিয়ে একজন নারীকে সরাসরি পুরুষের অর্ধেক মর্যাদা সম্পন্ন করা হয়েছে যা নিম্ন রূপ:

তোমাদের আপন পুরুষ লোকের মধ্য হইতে দুইজন সাক্ষী রাখ, যদি দুই জন পুরুষ না পাওয়া যায় , তাহা হইলে একজন পুরুষ ও দুই জন স্ত্রীলোক—- সূরা-২: বাক্কারা, আয়াত-২৮২

এটাতেও নাকি নারীদের অমর্যাদা করা হয়নি বলে ইসলামী পন্ডিতদের দাবী। তাদের বক্তব্য- আলোচ্য বিষয়টি হলো কোন চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে। বলা বাহুল্য একটি চুক্তিপত্র করতে সাক্ষীর দরকার হয়। আর এ সাক্ষীর ক্ষেত্রে একজন পুরুষ পাওয়া না গেলে দুইজন নারীর সাক্ষী নিতে হবে। কেন দুইজন নারী একজন পুরুষের পরিবর্তে? তার উত্তরে তাদের ব্যখ্যা- একজন নারীর নানারকম প্রাকৃতিক অসুবিধা থাকতে পারে যেমন- ঋতুকালীন সময়, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি আর সেকারনে সে প্রয়োজন হলে সাক্ষ্য প্রদানের সময় কোর্ট কাছারী ইত্যাদিতে হাজির হতে পারবে না। সেক্ষেত্রে দুই জন নারী সাক্ষী থাকলে একজন যদি পূর্বোক্ত সমস্যায় হাজির হতে অপারগ হয় তো অন্য জন সেক্ষেত্রে হাজির হয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারবে।

এক্ষেত্রে কতগুলি স্বতঃসিদ্ধ ধারনা আগে থেকেই করে নেয়া হয়েছে, যেমন-

১। ঋতুকালীন সময়ে নারীরা একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে ও চলাচল করতে পারে না।
২। নারীরা গর্ভবতী হওয়া মাত্রই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ।

এখন দেখা যাক, বাস্তব অবস্থা কি। ঋতুকালীন সময়ে খুবই কম সংখ্যক মহিলা সামান্য একটু শারিরীক অসুবিধা বোধ করে। আজকাল কোন মেয়েই তার পিরিয়ডের সময় কাজ বাদ দিয়ে ঘরে বসে আছে এরকম দেখা যায় না। নারীরা গর্ভবতী হওয়ার পর বরং তাকে বসে না থেকে হাটা চলা করার জন্য ডাক্তারী উপদেশ দেয়া হয় তবে কঠিন কাজ করতে নিষেধ করা হয়। প্রসব হওয়ার মাত্র দুই তিন সপ্তাহ আগে তার চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। তার চেয়ে বড় কথা হলো- একটা নারী তো জীবনের সব সময় গর্ভবতী থাকে না। তবে যদি ১৪০০ বছর আগেকার আরব দেশের কথা চিন্তা করি তাহলে বক্তব্য ঠিক আছে। মরুভুমিতে কোন রাস্তা ঘাট ছিল না, উট দুম্বার পিঠে মানুষকে যাতায়াত করতে হতো। তো একজন গর্ভবতী নারীর পক্ষে উট দুম্বার পিঠে চলাচল করাটা ছিল কঠিন। সুতরাং সে দিক থেকে সেই ১৪০০ বছর আগের আরব দেশের প্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত ঠিক আছে। কিন্তু আজকেও কি তা ঠিক আছে ? আজকে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নতির যুগে গর্ভবতী নারীর জন্য যাতায়াত তো কোন সমস্যা না। কিন্তু কোরান বলছে যে- তার বানী আর নির্দেশ কেয়ামতের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এখন শিক্ষিত নারীরা কি বলেন? আপনারা কি চান আপনাদের সাক্ষী এখনও একজন পুরুষের অর্ধেক থাকবে ? অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়- আমি শিক্ষিত কিছু নারীর সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা কিন্তু এ ব্যপারে নীরব। তারা বলে এ ব্যবস্থা সেই প্রাচীন আরবের জন্য প্রযোজ্য ছিল। যখন বলি- কোরানের নির্দেশ কেয়ামত পর্যন্ত । তখন তারা বলে- সবই আল্লাহর ইচ্ছা ও আর কোন যুক্তি না দিয়ে চুপ করে যায় ও সেই বহু বিখ্যাত আপ্ত বাক্য উচ্চারন করে- আল্লাহ বলেছেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। অথবা সবক দেন এ বিষয়ে আরও বেশী পড়তে যদিও নিজেরা পড়াশুনার একেবারেও ধারে কাছে যায় না। এর পর আর শত চেষ্টাতেও তার সাথে আর ইসলাম নিয়ে কথা বলা যায় না। তার চেয়ে বড় কথা হলো- নারী যেমন গর্ভবতী হয়ে সাক্ষ্য স্থলে যেতে অপারগ হতে পারে, পুরুষ মানুষটিও তো অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে পারে। তাহলে? তাহলে তো যে যুক্তিতে এক জন পুরুষের বদলে দুই জন নারীর সাক্ষীর কথা বলা হচ্ছে সে যুক্তি তো পুরুষের বেলায়ও প্রযোজ্য। তাহলে?

ইসলামী রাষ্ট্রে বা ইসলামী মতে রাষ্ট্রের প্রধান যে নারী হতে পারবে না, তারও মূল কারন কিন্তু আল্লাহর এ আয়াত। কারন একজন পুরুষের অর্ধেক মর্যাদার যে নারী সে তো মেধা বুদ্ধি সব বিষয়েই পুরুষের অর্ধেক। সে কিভাবে একটা রাষ্ট্রের প্রধান হয়? ঠিক একই কারনে ইসলামী মতে- তাদের কোন ভোটাধিকার নেই , থাকাও উচিত নয়। বাংলাদেশে জামাত ইসলাম সহ যে সব ইসলামী দল আছে তাদের সংবিধানেও উল্লেখ আছে নারীরা কখনই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে না। এর কারন কুরানের এই আয়াত। এসব নিয়ে শিক্ষিত মুসলিম নারীদের সাথে কথা বলতে গেলে ওরা বলে- ওটা সেই জমানার ঘটনা , এখনকার না। তাদেরকে আবার এ আইন কেয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকার কথা স্মরন করিয়ে দিলে বলে- ওটা তখন আল্লাহ কেন বলেছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন। ব্যস আর তাদের সাথে কথা বাড়ে না। একদিন তো এক নারী বলেই বসল- আমরা যদি এ ব্যবস্থা নিয়ে সুখে থাকি তাতে আপনাদের অসুবিধা কোথায়? এখন আপনারাই বলুন এর কি উত্তর দেয়া যায়? কঠিন ইসলামী পরিবেশে থেকে এদের বুদ্ধি বৃত্তিটাই ভোতা হয়ে গেছে। অনেকটা সেই খাচার টিয়া পাখির মত। অনেক দিন খাচায় থাকার পর, তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও সে দুরে না গিয়ে খাচার মধ্যেই ফিরে আসে। কিন্তু আসল বিষয় হলো- এভব মুসলিম নারীদেরকে শৃংখলে আটকে রাকার পরও কিভাবে তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা দাবী করে যে , ইসলাম নারীদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছে ? এ দাবীটা পরিহার করলেই তো আমাদের আর কোন মাথা ব্যথা থাকে না।

আমার কাজের লোকটা কঠিন নামাজ দার মানুষ। লেখা পড়া তেমন জানে না। আমি তাকে বললাম- এত নামাজ পড়ো রোজা রাখো, কিন্তু আল্লাহ তো তোমার দিকে ফিরেও তাকায় না, যেমন গরীব ছিলে তেমনই রয়ে গেলে চিরকাল। সে বলল- সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি বললাম- মরার পর কোথায় যেতে চাও। বেহেস্তে ? সে উত্তর দিল- সবাই তো বেহেস্তে যেতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম- জানো বেহেস্তে কি আছে? সে বলল- যাবতীয় সুখ শান্তি সেখানে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম – যেমন ? বলল- সব ধরনের ভাল খাবার, ফল ফুল, ভাল ঘর বাড়ী, যা চাওয়া যাবে তা। আমি বললাম- তুমি জানো না যে সেখানে ৭০ হুর পাবে ফুর্তি করতে আর সুরা বা মদ খেতে পারবে যথেচ্ছ? বলল- না, এসব তো কোনদিন শুনিনি, কোন ইমাম তো মসজিদে কখনো এসব কথা বলে না। আমি আরও বললাম- তুমি তো পুরুষ মানুষ, তোমার জন্য ৭০ হুর আছে, কিন্তু তুমি কি জানো তোমার বউ যদি বেহেস্তে যায় বেহেস্তে তার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই ? সে সরল ভাবে স্বীকার করল- তা তো জানিনা। আমি বললাম- তোমার যদি ফুর্তি করার জন্য ৭০ টা হুর দরকার হয়, তোমার বউয়ের জন্য তো কম করেও ৭ টা পুরুষ থাকা দরকার কারন ফুর্তি তো খালি পুরুষ মানুষরাই করে না, মেয়েমানুষেরও তো ফুর্তির দরকার আছে। সে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল- সবই আল্লাহর ইচ্ছা , তিনি যা ভাল বোঝেন সেভাবেই ব্যবস্থা করবেন।

কি বুঝলেন? মসজিদ কেন , কোন ইসলামি জলসায় কিন্তু এখন আর হুর পরীর কেচ্ছা বলা বলি হয় না।কারন সহজেই বোধগম্য। প্রথমত: ওটা এক তরফা পুরুষের আনন্দ ফুর্তির বিষয় যা নারীদের কাছ থেকে এখন গোপন করা দরকার। দ্বিতীয়ত: কিচ্ছাটা আধুনিক জগতের সাথে বড়ই অমানানসই যা যৌক্তিকভাবে আধুনিক মানুষকে বোঝানো মুসকিল। ফলাফল হলো- এ বিষয়ে আধুনিক মানুষের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হলে তারা ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারনা করবে, তাই তা বাদ দিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই এসকল বোগাস ও আজগুবি লোভ লালসা দেখানোর কায়দা বাদ দিয়ে এখন তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা নেমেছে কোরানে কি সব বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও সূত্র আছে তা আবিস্কারে। কারন এটার বাজার এখন ভাল।

ধর্মপ্রান মুসলিম রমনীগন, দেখুন কোরান আপনাদের কি বলছে-

তোমাদের স্ত্রীগন তোমাদের শস্য ক্ষেত্র, সুতরাং তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে প্রকারে ইচ্ছা অবতীর্ন হও।সূরা-২: বাক্কারা, আয়াত-২২৩

এ সূরার অনেক ব্যখ্যাই ইতোপূর্বে অনেকেই করেছেন খুব ভালই ব্যাখ্যা করেছেন। তার পরেও নিত্য নতুন পাঠক/পাঠিকা যারা এ সাইটে আসেন তাদের জন্য আমার পূনর্ব্যখ্যা। শস্য ক্ষেত্র এর একজন মালিক থাকে। মালিক তার ক্ষেত্রে যেমন ইচ্ছা খুশী ভাবে লাঙল চালাতে পারে, যা ইচ্ছা খুশী চাষ করতে পারে। সেখানে ক্ষেত্রের কোন স্বাধীনতা বা ইচ্ছা নেই। ক্ষেত্র সেখানে বোবা। সে কখনো বলতে পারবে না যে- তুমি এখন আমার উপর চাষ করো না আমার শরীর খারাপ, বা আমার মন ভালো নেই এখন তাই চাষাবাদ করো না। তো একজন স্বামীর কাছে তার নারীর অবস্থানটা যে হুবহু সেরকম মোহাম্মদ কিন্ত সেটাই সুস্পষ্টভাবে এ আয়াতের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ একজন স্বামী যখনই কাম তাড়িত হয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়বেন তখনই তিনি তার স্ত্রীকে যেমন খুশী ভোগ করতে পারবেন, সেখানে স্ত্রীটির শরীর খারাপ নাকি মন খারাপ সেটা বিবেচ্য নয়। এমনকি যদি স্ত্রীটি কোন অজুহাত দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে- তাহলে তা তার জন্যে ভয়াবহ গুনার কাজ। অর্থাৎ নিজে প্রচন্ড কষ্ট দুঃখ পেলেও স্বামীকে তা বলা যাবে না সে সময়ে, কারন তার স্বামী প্রবর তখন প্রচন্ড কাম তাড়িত হয়ে ছট ফট করছেন ও তাকে খুশী করাই হলো স্ত্রীটির প্রধান কর্তব্য। বিষয়টি আসলেই যে তাই , হাদিসে কিন্তু তা সমর্থন করা হয়েছে, দেখুন-

আবু হোরায়রা থেকে বর্নিত, আল্লাহর নবী বলেছেন- যদি কোন স্ত্রীকে তার স্বামী বিছানায় ডাকে (যৌনমিলনের জন্য) আর সে স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয় যাতে তার স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে বাধ্য হয়, তখন ফিরিস্তারা সেই স্ত্রীলোকটিকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে। সহি বুখারী-ভলুম-৪, বই-৫৪, হাদিস-৪৬০

দেখুন এখানে যদি স্ত্রীলোকটির ন্যুনতম স্বাধীনতা বা অধিকার থাকত তাহলে উপরোক্ত আয়াত বা হাদিসে একটু সংকেত বা সংযোজন থাকত। যেমন তাহলে আয়াত টি হতে পারত এরকমÑ

তোমাদের স্ত্রীগন তোমাদের শস্য ক্ষেত্র, সুতরাং তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে প্রকারে ইচ্ছা অবতীর্ন হও। তবে স্ত্রীদের প্রতি একটু সংবেদনশীল থাকিও।

আর তাহলেই কিন্তু স্ত্রীটির সুযোগ বা অধিকার থাকত তার শারিরীক বা মানসিক সমস্যার কারনে তার স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়ার আর তাতে কোন গুনাহ হতো না।

অথবা যদি হাদিসটি এরকম হ’ত-

আবু হোরায়রা থেকে বর্নিত, আল্লাহর নবী বলেছেন- যদি কোন স্ত্রীকে তার স্বামী বিছানায় ডাকে (যৌনমিলনের জন্য) আর সে কোন কারন ( শারিরীক বা মানসিক সমস্যা) ছাড়া স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয় যাতে তার স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে বাধ্য হয়, তখন ফিরিস্তারা সেই স্ত্রীলোকটিকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে।

তাহলে দেখুন এখানে স্ত্রীটিকে সত্যিকার মানুষ হিসাবে গন্য করা হতো, তার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষিত হতো। উপরোক্ত আয়াত বা সূরা দ্বারা খুব পরিস্কার ভাবে আল্লাহর বানীর মাধ্যমে মোহাম্মদ নারীদেরকে শুধুমাত্র যৌন যন্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করেছে যা আবার হাদিসের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেছে। তো এই হলো- ইসলামে নারীর আসল মর্যাদা।বিশ্বাসী নারী পুরুষকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বলে আরও পড়তে হবে। কি পড়তে হবে ? অথচ নিজেরাই কিন্তু তা পড়ে না, যা বলে সব অন্যের বলা কথা তোতা পাখীর মত আউড়ে যায়। যেখানে আল্লাহ তার কোরানে বলেছেন- আমি কোরান নাজিল করেছি সহজ ভাষায় যাতে তোমরা বুঝতে পার। আর হওয়ার কথাও তো তাই। মোহাম্মদের তো আর প্রথাগত লেখাপড়ায় দখল ছিল না, তাই তার পক্ষে জটিল করে নান্দনিক কায়দায় কোন কিছু লেখা সম্ভব ছিল না। কোরানের পাতায় পাতায় যে সব সুরা লিপিবদ্ধ আছে তার ভাষা একেবারেই সহজ ও সরল। কোন রকম জটিলতা নেই। বর্তমানকার তথাকথিত ইসলামি পন্ডিতরাই অসাধু উদ্দেশ্যে মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্যেই তা জটিল করে তুলছে আর মানুষকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করছে কোরান তা না জানি কোন মহা রহস্যময় করে রচিত। আর সাধারন মুসলমান ভাই বোনেরা সেই রহস্যময়তার গোলকধাধায় ঘুরে মরছে।