[লেখাটি ২০০২ সালে ইংরেজীতে মুক্তমনা গ্রুপে “On the Subjectivity in Arts Appreciation” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। এই লেখাটা তারই বাংলা অনুবাদ। কিছু পরিবর্তন অবশ্য করা হয়েছে। এটাকে অনেকের কাছে বকবকানি বা কোন কোন ব্লগারদের ভাষায় “ক্যাচাল” মনে হতে পারে। কিছু দ্বিরুক্তি দোষ ও থাকতে পারে, যার জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার দিক দিয়ে অবশ্য এটা এক যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণের চেষ্টা। একটু ধৈর্য্য ধরে পড়লে এর মধ্যে কিছু চিন্তার খোরাক পাওয়া যাবে আশা করি – অপার্থিব]

অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সাধারণভাবে শিল্পের মূল্যাবধারণ (Art appreciation), বিশেষ করে কোন বিশেষ শিল্পরূপ বা বিশেষ শিল্পীর শিল্পের প্রতি আকর্ষণ বা রুচি মনের ভেতরে স্বকীয়ভাবে সৃষ্ট হয় না, বরং তা অনেকগুলো বাহ্যিক নির্ধারক বা গুণকের প্রভাবের ফলে সৃষ্ট হয়, যেমন বিনোদন মাধ্যমে কোনটা কত বেশি প্রচার পাচ্ছে, কোনটা বেশি জনপ্রিয় বিবেচনায় মাধ্যমগুলিতে সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে, বা বাজারে কোনটা বেশি সহজলভ্য ইত্যাদি। এছাড়া সঙ্গী সাথীদের প্রভাব তো আছেই। “তুমি অমুখ গানটা/গল্পটা/কবিতাটা/সিনেমাটা শোন/পড়/দেখ নি? বল কি? অবশ্যই শুনবে/পড়বে/দেখবে”। এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অনেকের মধ্যেই পাছে অন্যের কাছে নির্বোধ প্রতিপন্ন হতে হয় সেই ভয়ে অবচেতনভাবে ঐ সব শিল্প বা শিল্পীর প্রতি এক বহিঃপ্রোথিত আকর্ষন জন্মায়। এই সব বাহ্যিক গুণকগুলিকে এক কথায় হুজুগের গুণক বা গড্ডালিকা প্রবাহ বলা যেতে পারে। বিশেষ করে এই আধুনিক যুগের ব্যস্ত জীবনে বাইরের প্রভাবমুক্ত হয়ে নিভৃতে বসে সবরকম শিল্পের স্বাদ গ্রহণ করে নিজের মন থেকে বিচারপূর্বক পছন্দ বা অপছন্দের ধারণা বা রুচিভেদ সৃষ্টি কজনা করতে পারে। যে কোন শিল্পরূপ তা সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, নাট্য বা চলচ্চিত্র যাই হোক, সবটার ভেতরেও প্রকার বা রকমভেদ আছে, যাকে ইংরেজীতে Genre বলে। সব শিল্পরকম গুলোর সাথে পরিচিত হয়ে মনের স্বকীয় বিচারবোধ দ্বারা স্বাধীনভাবে সেগুলিকে বিচার করে পছন্দ অপছন্দের পার্থক্যীকরণ বা রুচিভেদ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু দেখা যায় সেই সুযোগ পাওয়ার আগেই বা রুচিভেদ সৃষ্টির এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায়, উপরেল্লিখিত বাহ্যিক নিয়ন্ত্রকের দ্বারা অনেকের পছন্দ অপছন্দ পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে যায়। কোন বিশেষ শিল্পরকমের ভেতরে বিশেষ শিল্পী বা শিল্পকর্মের প্রতি আকর্ষণের বেলায়ও একই ব্যাপারই ঘটে। অবশ্য আরেকটা বিবেচ্য বিষয় হল স্বকীয় বিচারবোধের আত্মনিষ্ঠতা (Subjectivity)। স্বকীয় বিচারবোধটা প্রখর হলেও আত্মনিষ্ঠতার কারণে এক-এক জনের কাছে এক-এক শিল্পরূপ, রকম বা শিল্পী আবেদন সৃষ্টি করে। আবার এটাও ঠিক যে স্বকীয় বিচারবোধের মাত্রা বা প্রাখর্য্য সবার মধ্যে সমান নয় বা অনেকের মধ্যে তা খুবই দুর্বল। জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশের জন্য এটা হয়ত সত্য। আর এই দুর্বল স্বকীয় বিচারবোধের কারণে তাদের রুচিবোধ সহজেই বাহ্যিক নির্ধারকের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই এই বিরাট অংশের মধ্যে রুচির এক সাদৃশ্য দেখা যায়। যারা মনোবিজ্ঞানের মীম (Meme) এর ধারণার সাথে পরিচিত তারা এটা যে মীমের ক্রিয়া সেটা সহজেই বুঝতে পারবেন। তারা অন্যেরা কি বলছে, কোনটা নিয়ে লোকেরা বেশি আলোচনা করছে, এক কথায় প্রচার, তার দ্বারাই প্রভাবিত হয়, তাকে গুরুত্ব দেয়। জনতার এই বিরাট অংশ একে অপরকেও রুচি সৃষ্টিতে প্রভাবিত করে, এবং তা উত্তরোত্তর তাদের সেই সাধারণ (অর্থাৎ কমন) রুচিবোধকেই র্দৃঢ়ীকৃত (Reinforce) করে । তাদের পছন্দের বাইরে অন্য কোন শিল্পরূপ, রকম বা শিল্পীর কথা তারা চিন্তাই করে না বা অনুসন্ধানের তাগিদও অনুভব করেনা, কারণ মীম তাদেরকে সেদিকে চালিত করেনি। অর্থাৎ তাদের ভাল লাগাটা বা না লাগাটা নিজের মনের ভেতরের কোন স্বকীয় বিচারবুদ্ধি দ্বারা সৃষ্ট কোন তথ্যাভিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নয়। তাদের ভালা লাগাটা অনেকটা আত্মসম্মোহনের মত, স্ব-আরোপিত মগজ ধোলাই,এত লোকের যখন এটা ভাল লাগছে, অতএব তারও এটা ভাল লাগা উচিত। তাদের ভাল লাগাটা অন্তর থেকে আসে না বলে তারা এর খুব ভেতরে যেতে পারে না। ভাল লাগাটা ভাসা ভাসা। এদের দেখা যায় যে তাদের পছন্দের সঙ্গীত অন্যদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় বা একা অন্যন্য কাজ করার সময় আবহ বা নেপথ্য সঙ্গীত হিসেবে শোনে। নিভৃতে একা বসে অন্য সব কিছু ছেড়ে গভীর মনে শোনে না। একই কারণে তাদের পছন্দের শিল্পরূপ, রকম বা শিল্পীর শিল্পকর্মের খুব গভীরে গিয়ে তার মধ্যে সবিচার বিশ্লেষণ বা পার্থক্যীকরণ (সেটা আত্মনিষ্ঠ মানদন্ডেই হোক) তারা করতে পারে না। তাদের কাছে সবই সমানভাবে আবেদন করে, হয়ত সামান্য কম বেশি। এর বিপরীতে যারা বাইরের প্রচার, প্রভাব উপেক্ষা করে আত্মতুষ্টির জন্য শুধু মনের স্বকীয় বিচারবোধের দ্বারা পরিচালিত হয়, তাদের ভাল লাগা বা না লাগাটা একটা তথ্যাভিজ্ঞ সিদ্ধান্ত (Informed Decision) এবং তাই তারা তাদের পছন্দকে হাল্কা ভাবে নেয় না। স্বকীয় বিচারবোধ বলতে শৈল্পিক বিচারবোধ (Art Discrimination)ই বোঝান হবে এই লেখায়। সাধারণ অর্থে বিচারবোধ নয়। স্বকীয় বিচারবোধের দ্বারা পরিচালিত হবার কারণে তাদের পছন্দের শিল্পরূপ, রকম বা শিল্পীর শিল্পকর্মের মধ্যে সবই যে সমানভাবে আবেদন করবে তা নয়। এমনো হতে পারে যে একই শিল্পীর কোন শিল্পকর্ম তাকে আকর্ষণ করে আবার অন্য কোন শিল্পকর্মের প্রতি আকর্ষণ তো নয়ই বিকর্ষণও বোধ করতে পারে। এটাই প্রত্যাশিত। কারণ স্বকীয়ভাবে (Intrinsically) কোন কিছু ভাল লাগা বা না লাগার পেছনে একটা বস্তুনিষ্ঠ(Objective) কারণ বা গুণক থাকে। ভাল লাগা বা না লাগাটা আবার আত্মনিষ্ঠ বা ব্যক্তিনির্ভর (Subjective) । সাংকেতিকভাবে বলা যায় আত্মনিষ্ঠ স্বকীয় বিচারবোধ + বস্তুনিষ্ঠ গুণক = রুচিভেদ। একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝান যাক। কারও সবুজ রঙ পছন্দ, আবার কারো নীল। আবার যার সবুজ পছন্দ তার হয়ত নীল খুবই অপছন্দ বা এর উল্টোটা। এই রঙের পছন্দ/অপছন্দটা ব্যক্তিনির্ভর ঠিকই কিন্তু সবুজ বা নীল রঙ কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ ধারণা। সবুজ রঙ সবুজ বা নীল রঙ নীল হয় বিশেষ তরংগদৈর্ঘ্যের কারণে। তরংগদৈর্ঘ্য এক বস্তুনির্ভর গুণক। সেরকমভাবে কোন শিল্পকর্মও কারো কাছে আবেদন করে ঐ শিল্পকর্মের কোন বস্তুনির্ভর গুণকের কারণে। সেটা যে কি সবসময় তা চিহ্নিত করা যায় না। কিন্তু সেটা যে আছে এটুকু বলা যায়। শিল্পের আবেদনের এই বস্তুনির্ভর কারণের অস্তিত্ব ও তার চিহ্নিতকরণ বিজ্ঞানীদের গবেষণার এক বিষয়, যার কিছু আলোচনা আমি আমার “বিজ্ঞান, শিল্প ও নন্দনতত্ত্ব” প্রবন্ধে আলোচনা করেছিলাম। কোন শিল্পীর একটা শিল্পকর্মে ঐ বস্তুনির্ভর গুণক থাকলেও অন্য সব শিল্পকর্মেই যে সেটা থাকবে বা বিকর্ষক কোন গুণক থাকবে না এরকম বলা যায়না। সেই কারণেই বলেছিলাম যে একই শিল্পীর কোন শিল্পকর্ম তাকে আকর্ষণ করতে পারে আবার অন্য কোন শিল্পকর্মের প্রতি সে আকর্ষণ তো নয়ই বরং বিকর্ষণও বোধ করতে পারে। মীম তাড়িত ভক্তদের বেলায় এই বস্তুনির্ভর গুণক অপ্রাসঙ্গিক, কারণ তাদের স্বকীয় বিচারবুদ্ধি না থাকায় (বা অব্যবহৃত থাকায়) বস্তুনির্ভর গুণকের সাথে ব্যক্তিনির্ভর স্বকীয় বিচার এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ঘ্টার প্রশ্ন উঠেনা। তারা শুধু একটা লেবেলের ভক্ত, মীম তাদেরকে যে লেবেলের প্রতি চালিত করে সেই লেবেলের। অন্য লেবেলের ভক্ত তারা নয় যেহেতু মীম তাদেরকে সেদিকে চালিত করেনি। আবার তারা যে লেবেলের শিল্পী বা শিল্পরূপের ভক্ত, সেই লেবেলের আওতায় যা কিছুই পড়বে সেটাই তাদের ভাল লাগবে। ভাল লাগাটা কিছুটা কম বেশি হয়ত হবে, কিন্তু সেটা ভালা লাগাই, ভাল না লাগা নয়। কিন্তু যেটা বোঝালাম এই ভাল লাগাটা নির্বিচার, বাহ্যিকভাবে প্রভাবিত, অন্তরে সৃষ্ট নয়। স্বকীয় বিচারবোধের দ্বারা পরিচালিত লোকদের রুচিভেদ আত্মনিষ্ঠ মানদন্ডের দ্বারা নির্ধারিত হলেও এদের রুচি সৃষ্টিতে মীমের কোন ভূমিকা নেই, এটা সম্পূর্ণ আত্মকৃত। আর তাদের পছন্দটা লেবেল অনুযায়ী হয় না। যেটা অন্তরে নাড়া দেয় সেটাই পছন্দের মধ্যে পড়ে, সেটা যে লেবেলেই পড়ুক না কেন। তাদের পছন্দের শিল্পী বা শিল্পকর্ম জনপ্রিয় বা বিখ্যাত নাও হতে পারে, হয়ত কোন অখ্যাত কোন শিল্পী বা শিল্পকর্ম। এর জন্য তারা কোন হীনমন্যতা বোধ করে না, কারণ শিল্পের আস্বাদন সম্পূর্ণভাবে আপন চিত্তের আনন্দের জন্য। অবশ্য পছন্দটা লেবেল দ্বারা নির্ধারিত না হলেও দেখা যায় যে তাদের পছন্দ সমূহ সার্বিক ভাবে এক বিশেষ লেবেলের দিকেই বেশি ঝুঁকে যায়। কাজেই তাদের ক্ষেত্রে একটা বিশেষ লেবেল যে তাদের পছন্দ সেটা সাধারণ অর্থে বলা যায়, যদিও মনে রাখা দরকার যে অন্য কোন লেবেলের কিছু অংশ তাদের ভাল লাগতেই পারে, কারণ সেটা তাদের ভাল লাগার স্বকীয় মানদন্ডকে পূরণ করে। তাহলে এটা দেখা গেল যে কোন শিল্পরূপ, রকম বা শিল্পীর দুরকম ভক্ত বা অনুরাগী হতে পারে। পরবর্তী আলোচনার সুবিধার্থে যাদের পছন্দ মীম দ্বারা প্রভাবিত তাদেরকে সাংকেতিকভাবে “ক” দ্বারা উল্লেখ করা হবে আর যাদের পছন্দ স্বকীয় বিচারে সৃষ্ট তাদেরকে “খ” এর দ্বারা উল্লেখ করা হবে। পছন্দের বিষয়কে, অর্থাৎ সেই শিল্পরূপ, শিল্পরকম বা শিল্পীকে সাধারণভাবে “X” দ্বারা চিহ্নিত করা হবে। “X” হতে পারে সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, সঙ্গীত, নজরুলগীতি, Jazz, Stan Kenton(আমার পছন্দ), ইত্যাদি। ‘খ’ রা “X” এর সীমানার ভেতরের কোন কোন অংশকে পছন্দ নাও করতে পারেন। “ক” রা এই ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। যদি কখনও কথাচ্ছলে ‘খ’ তার যে কোন বিশেষ শিল্পীর বিশেষ কোন গান/কবিতা পছন্দ নয় এটা ‘ক’ কে জানায়, তাহলে ‘ক’ ধরেই নেয় যে সেই শিল্পীকে ‘খ’ এর পছন্দ নয় বা বোঝে না। এটা অনেকটা কারও চাইনীজ মেন্যুর একটা আইটেম অপছন্দ হল বলে চাইনীজ খাবারই তার অপছন্দ ধরে নেয়ার মত ব্যাপার। আবার যদি ‘ক’ ‘খ’ কে সাধারণভাবে তার প্রিয় সঙ্গীতশিল্পরূপ কি জিজ্ঞেস করে আর উত্তরে ‘খ’ যদি বলে জ্যাজ (বা ক্ল্যাসিকাল), তাহলে ‘ক’ ধরেই নেয় (অবচেতনভাবে) যে জ্যাজ (বা ক্ল্যাসিকাল) এর আওতায় তাবৎ শিল্পী বা তাবৎ সঙ্গীত ‘খ’ কে আবেদন করবে। জ্যাজ বা ক্ল্যাসিকালের কোন্‌ বিশেষ দিক বা বিশেষ শিল্পী ‘খ’ র প্রিয় এই বাড়তি প্রশ্ন তারা করে না। বা কোন বিশেষ দিক বা শিল্পী যে ‘খ’ এর অপছন্দ হতে পারে এটাও ‘ক’ এর চিন্তায় আসে না। দেখা যায় ‘খ’ এর পছন্দ জানার পর ‘ক’ ‘খ’ কে এমন কোন গানের সিডি উপহার দিল, যা ‘খ’ কোনদিন বাজিয়েই শুনল না। বা ‘খ’ এর জ্যাজ পছন্দ শুনে সোৎসাহে কোন একদিন এক বিশেষ জ্যাজ ব্যান্ডের কন্সার্টের খবর দিয়ে টিকেট কিনে দিল ‘খ’ কে কন্সার্টে যাবার জন্য, কিন্তু সেই কন্সার্টে ‘খ’ যেতে উৎসাহী নয় শুনে ‘ক’ অবাক ও হতাশ হয়ে ‘ক’ ‘খ’ কে বলল “তুমি না বললে জ্যাজ তোমার পছন্দ…“। এরকম ঘটনার আরও বহু উদাহরণ দেয়া যায়। উদ্দেশ্য ভাল হওয়া সত্বেও বোঝার ভুলের জন্য কত যে অপচয় হয় তার ইয়ত্তা নেই।

কোন শিল্পী বা শিল্পকর্ম কে ভাল লাগা বা না লাগাটা যেমন ব্যক্তিনির্ভর বা আত্মনিষ্ঠ বলাই বাহুল্য ঠিক তেমনি কোন শিল্পী বা শিল্পকর্ম কত বড় বা মহান তার বিচারও ব্যক্তিনির্ভর বা আত্মনিষ্ঠ। শিল্পে শ্রেষ্ঠত্ব বা মহত্ব বিচারের কোন সার্বজনীন মানদন্ড নেই । বাস্তবে কোন শিল্পী বা শিল্পকর্ম কতটা মহান বা জনপ্রিয় বিবেচিত হবে তা নির্ভর করে বাজারে তার কাটতি কেমন, সমালোচকেরা কতটা প্রশংসা করছেন বা পজিটিভ রেটিং দিচ্ছেন এগুলির উপর । জনপ্রিয়তার আরেক কারণ পরিমাণও বটে। কোন শিল্পী যদি প্রচুর পরিমাণ শিল্প সৃষ্টি করে যান নিয়মিতভাবে তাহলে সেটা অপেক্ষাকৃত সহজভাবে জনতার ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আর বেশি পরিমাণ শিল্প সৃষ্টি করে ভোক্তাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে নতুন খোরাক যোগাতে পারায় জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি বা পোক্তকরণে সেটা সহায়তা করে। এর বিপুল পরিমাণ শিল্পসৃশটির সবই যে একই মানের (যে মানদন্ডেই হোক) তা নয়। কিন্তু কিছু শিল্প কর্ম বেশ নাম করার কারণে অন্য সব শিল্প কর্মও পাস হয়ে যায়, স্বকীয় বিচারের অবর্তমানে। অন্য কোন নাম না জানা শিল্পী তারা হয়ত একই বা আরও উঁচু মানের অপেক্ষাকৃত কম শিল্প সৃষ্টি করেছেন, তাই দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছেন। আরেকটা হল জনশ্রুতি বা লোকমুখে প্রচার বা মীম ফ্যাক্টর। এই মীম ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর দ্বারা এক বিশাল জনগোষ্ঠী নিজের বিচার বিবেচনা ব্যবহার না করেই ভক্ত হয়ে পড়ে কোন শিল্পীর বা শিল্প কর্মের, যা ঐ শিল্পীর বা শিল্প কর্মের খ্যাতি বা জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়তা করে। এই লোকমুখ প্রচারটা শুরু হয় ছোট মাত্রায়। ধীরে ধীরে তা গতিবেগ বা মোমেন্টাম সঞ্চয় করতে থাকে, একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে থাকে এবং এক সময় তা এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে ফেলে। ধর্ম বা যে কোন মতবাদের সূচণাও হয় এরকম একজন বা স্বল্প কয়েকজ্নের খ্যাপন থেকে। বাজারে কাটতিও এর সাথে জড়িয়ে যায়, এবং একে অপরের ইন্ধন হিসেবে কাজ করে জনপ্রিয়তাকে বাড়তে থাকে। যাকে ইংরেজীতে স্নোবল এফেক্ট বলে। সমালোচকের প্রশংসামূলক রিভিউ এর কথা উল্লেখ করেছিলাম। এই সমালোচকেরা যে কোন পরীক্ষা দিয়ে সমালোচক হন তা নয়, বা কোন বস্তুনিষ্ঠ মানদন্ডের নিরীখে তাঁরা ভোটে নির্বাচিত হন তাও নয়। তাঁরাও তাদের মর্যাদায় অনানুষ্ঠানিকভাবে আসীন হন এক ব্যক্তিনিষ্ঠ বিচার বা বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই । কিন্তু জনপ্রিয়তা সৃষ্টিতে মানুষের উপর তাঁরা শক্তিশালী প্রভাব রাখেন। সমালোচকের প্রশংসামূলক রিভিউ ও বাজারে কাটতির ফলে কোন বিশেষ পুরস্কারের বিচারকমন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। পুরস্কার প্রাপ্তি এই জনপ্রিয়তা বিস্তারে আরো গতির সঞ্চার করে। একটু চিন্তা করলে এটা পরিস্কার হয়ে যাবে যে এই জনপ্রিয়তায় ‘ক’ শ্রেণীর ভক্তদের অবদানই বেশী। অর্থাৎ কোন শিল্পী বা শিল্পকর্মের খ্যাতি বা জনপ্রিয়তা অনেক মানুষের স্বতন্ত্রভাবে তাদের স্বকীয় শৈল্পিক বিচারবুদ্ধির দ্বারা সৃষ্ট হয় না। জনপ্রিয়তায় মীমের প্রভাব ওতপ্রোতভাবে মিশে যায়, সেটাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। জনপ্রিয়তা একটি পর্যায়ক্রমিক ও পুঞ্জীভূত ক্রিয়া (Cumulative Effect)যার পেছনে একটা ইতিহাস থাকে। অনেকটা বিবর্তনের মত। খ্যাতি বা জনপ্রিয়তার এই চরম পর্যায়ে আসার পর যদি কোন ‘খ’ তার স্বকীয় বিচারের দ্বারা সেই জনপ্রিয় শিল্পীর শিল্পকর্মে (সাধারণভাবেই হোক বা কোন বিশেষ শিল্পকর্মে হোক) আবেদন খুজে না পায় তাহলে অবধারিতভাবে তাকে শুনতে হবে “তাঁকে বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই” বা “এটা বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই”, “বড় বড় সমালোচকরা তাঁর কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ”, “অগণিত লোক এটার উচ্ছসিত প্রশংসা করছে, আর তুমি কোথাকার কে…” ইত্যাদি। বাংলাদেশে কেউ যদি বলে হুমায়ুন আহমদের লেখা তার ভাল লাগে না তাকে অবধারিতভাবে এমন কথা শুনতে হবে। অর্থাৎ এই পর্যায়ে স্বকীয় শিল্পবিচারের দ্বারা কারও ভাল লাগা না লাগাটাকে তার বৌদ্ধিক ক্ষমতা বা অক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়। শৈল্পিক পছন্দের স্বকীয় বিচারবোধকে জনপ্রিয়তার মানদন্ডে ফেলে স্বকীয় বিচারবোধেরই মান বিচার করা হয়। এর কোন যৌক্তিকতা নেই, কারণ স্বকীয় বিচারবোধটা একেবার আত্মনিষ্ঠ বা ব্যক্তিনির্ভর। এই মীম ফ্যাক্টরের প্রভাব একটা ছোট মানসপরীক্ষার দ্বারা সুন্দর ভাবে বোঝান যেতে পারে। যদি কেউ বিখ্যাত কোন কবির বিখ্যাত কোন কবিতার কিছু লাইন ‘ক’ কে নিজের লেখা বলে শোনায়, এবং ‘ক’ ঐ কবিতার সাথে পরিচিত না হয়, তাহলে খুব সম্ভবত ‘ক’ তাতে খুব চমৎকৃত হবে না। কিন্তু যদি আবৃত্তি করার আগে ‘ক’ কে বলে দেয়া হত এটা অমুক কবির এক কবিতার লাইন, তাহলে শোনার পর ‘ক’ মাথা নাড়িয়ে আহা কি চমৎকার এমন মন্তব্য করবে খুব সম্ভবত। একই কথা বলা যায় কোন উক্তি বা প্রবচনের ক্ষেত্রে। নিজের বলে চালালে কোন মূল্য পাবে না, কিন্তু বিখ্যাত কারো নামে উদ্ধৃত করলে সেটা সমাদৃত হবে। কিম্বা যদি বেটোফেনের কোন সিম্ফনী ‘ক’ কে নির্বিঘ্নে শোনান হয় ড্রইং রুমে বসে এবং বলে দেয়া হয় এটা বেটোফেনের অমুক সিম্ফনী, শোনার পর সে হয়ত উচ্ছ্বসিত প্রশংসার সাথে এর শৈল্পিক সৌন্দর্য্য ও গভীরতার কথা বলবে। অথচ একই সঙ্গীত না বলে কয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত হিসেবে অন্য কিছুর সাথে যখন বাজে তখন হয়ত সেটা তার দৃষ্টিই আকর্ষণ করে না বা মনকে নাড়া দেয় না।

আরেকটা ব্যাপার যেটা বাস্তব জীবনে লক্ষ্য করা যায় তা হল একটা ৩ ঘন্টার চলচ্চিত্রে বা ৩০০ পাতার উপন্যাসে হয়ত কয়েক মিনিট বা কয়েক লাইন জীবনদর্শন, মনস্তত্ব নিয়ে কোন তত্ব বা সত্যকে তুলে ধরল, আর সেটা নিয়েই সমালোচক বা পর্যালোচকেরা উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রশংসামূলক সমালোচনা পর্যালোচনা করলেন, আর সাধারণ দর্শক পাঠকেরাও সেই উন্মাদনায় মেতে উঠল। কিন্তু হয়ত এই উচ্ছ্বসিত প্রশংসকেরাই জীবনদর্শন, মনস্তত্ব বিষয়ে এই সত্যই বা এর চাইতে গভীর কোন সত্য বা তত্ব কোন জ্ঞানী (কিন্তু সেলেব্রিটি নয়) লোকের মুখে শোনার পর বা কোন বই বা প্রবন্ধে পড়ার পর তেমন আমলই দিলনা, বা এগুলিকে একঘেয়ে রসকষহীন কপচানী বা বুলী বলে এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিল। সত্যকে রঙ্গীন মোড়কে মুড়িয়ে না দিলে বা সত্যটা বিনোদন মাধ্যমের মারফত না আসলে এদেরকে আবেদন করে না। বাচ্চাদের মনস্তত্বের একটা দিক আমরা জানি যে তাদেরকে খেলার ছলে অংক শেখালে সহজে তা গ্রহণ করে। এই ধরণের মানুষের বেলায়ও একই কথা সত্য। অনেক সময় দেখা যায় যে কোন কবিতা, গান, গল্প বা সিনেমা দর্শক/পাঠক/শ্রোতাদের মধ্যে খুব হৈচৈ উন্মাদণা সৃষ্টি করে, তাদের বলতে শোনা যায়, এর মধ্যে অনেক গভীর সত্য আছে ,এটা দেখলে, পড়লে তুমি জীবনের অনেক গভীর সত্য সম্পর্কে জানবে ইত্যাদি। কিন্তু এই রঙ্গীন মোড়ক, ভাষার অলঙ্কার, ইত্যাদি সরিয়ে ফেললে যেটা থাকে সেটা হয়ত আহামরি গভীর কোন মর্মোপলব্ধি নয়, জীবন সম্পর্কে ট্রিভিয়াল কোন সত্য মাত্র। সত্য আর বিনোদন, দুটো সম্পুর্ণ আলাদা ব্যাপার। বিনোদনের মাধ্যমে সত্যকে জানার চেষ্টা এক ভ্রান্ত, অসম্পুর্ণ এবং বালকসুলভ প্রয়াস। এটা ঠিক যে অনেক জানা সত্যও শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললে তা মনে নাড়া দেয়। আমরা অনেক সত্যই মনে মনে জানি এবং মূল্য দেই, সেটা যখন শিল্পের মাধ্যমে কেউ পুনর্ব্যক্ত করেন, তখন তা এক সুখকর অনুভূতি দেয়, তার মানে এই নয় যে সত্যটা নতুন করে বা আরও গভীরভাবে জানা হল। কিন্তু এই নাড়া দেয়া বা সুখকর অনুভূতি সৃষ্টিতে ভূমিকাটা শিল্পশৈলীর, সত্যটার নয়, কারণ সেটা ইতিমধ্যেই জানা । অনেকের জন্য সত্যকে জানাটাই তাদের মনকে নাড়া দেয়। তাদের জন্য বাড়তি বিনোদনের মোড়ক অপ্রয়োজনীয়। আবার স্রেফ বিনোদনের জন্য তার মধ্যে কিছু সত্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে এমন কথাও নেই। বিনোদনের জন্য সত্য যেমন অপরিহার্য নয়, সত্যকে বোঝা বা জানার জন্য তেমন বিনোদনও অপরিহার্য্য নয়। বিনোদনের মধ্যে সত্য ছড়ান থাকলেও বুঝতে হবে যে বিনোদনটাই মুখ্য, সত্যটা নয়। আবার কোন বিশেষ শিল্পীর ভক্তরা সেই শিল্পীর বিশেষ কোন শিল্পকর্মে এক লুক্কায়িত গভীর কোন বাণী আছে বলে দাবী করে। কেউ তা অস্বীকার করলে তারা বলে “এটা বোঝার ক্ষমতা তার নেই,এটা খুব গভীর ব্যাপার,‌ সবার পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয়” ইত্যাদি। এটা হাস্যকরই বটে। গভীর বাণীটা কি সেটা তারা স্পষ্ট করে বলে না কখনো। আর যদি থেকেও থাকে সেটা যে কি তা শিল্পী নিজে স্পষ্ট করে না বললে, তিনি ছাড়া আর কারও পক্ষে নিশ্চিত ভাবে জানার কথা নয়। কিন্তু আসলে এটাই সম্ভবত সত্য যে আসলেই শিল্পী নিজে কোন বাণী লুকিয়ে রাখেননি তাঁর কর্মে। এটা শিল্পীকে ঘিরে ভক্তদের একটা কাল্ট সৃষ্টির চেষ্টা, এটা মনে করা বা বলে বেড়ান যে তারাই শুধু এই লুকান বাণী বোঝেন, অন্যেরা নয়। শিল্পী সাহিত্যিকদের কর্মে কোন বানী বা সত্য থাকে (যদি সত্যিই থেকে থাকে) আমার মনে হয় না তা খুব গভীর, বা অভিনব কিছু যেমনটি আমরা বিবর্তন মনোবিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের আধুনিক দর্শন পড়ে জানতে পারি, মানুষের মন থেকে শুরু করে মহাবিশ্ব সৃষ্টির তাবৎ ধারণাগুলি সম্পর্কে। শিল্পীদের মূল কৃতিত্ব শিল্পকে ভাষা, চিত্র বা দৃশ্যের অলঙ্কারে আবেদনময়ী করে সৃষ্টি করে পাঠক/দর্শকের কাছে তুলে ধরা। তারা কখনই উঁচুমানের দার্শনিক বা বিজ্ঞানী হতে পারেন না। বিপুল পরিমাণ শিল্প সৃষ্টি করা এক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। দর্শন বা বিজ্ঞানের গভীর জ্ঞান জানার মত সময় বা ইচ্ছা তাদের না থাকারই কথা, বা অন্য সব মানুষের চেয়ে জীবনকে দেখা বা জানার অভিজ্ঞতা তাঁদের যে বেশী তাও নয়। দৈনন্দিন জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা, দৃশ্য, যা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না বা মনের মধ্যে এক কাব্যিক ভাব জাগায় না, সেগুলিকেই শিল্পীরা সুন্দর ভাবে ভাষায়, চিত্রে, সংলাপে বা দৃশ্যে ব্যক্ত করার ক্ষমতা রাখেন। সেখানেই শিল্পীর কৃতিত্ব। এর মধ্যে গভীর অর্থ থাকতেই হবে এমন কথা ভাবার কোন কারণ নেই। শিল্পীর শিল্পকর্মে মানে খোঁজার চেষ্টা অনেকেই করেন। কেউ কোন কবিতা বা লেখাতে গভীর অর্থ খুঁজে পেলেন, আবার কেউ তা পড়ে মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলেননা। কে ঠিক? আমার মতে দুজনই। নিজের মনে কোন একটা মানে কেউ যদি দাঁড় করাতে পারেন, আর যতক্ষণ না তিনি ঐ মানেকেই ঠিক দাবী করেন আর অন্যের মানেকে ভুল বলে দাবী না করেন, ততক্ষণ তাকে ভুল বলাও যাবে না। একইভাবে যিনি কোন মানে দাঁড় করাতে পারলেন না তাঁকেও ভুল বলা যাবে না, যতক্ষণ না যিনি মানে দাঁড় করাতে পেরেছেন তার মানেকে তিনি ভুল বলে দাবী না করেন। মানে খুঁজে পাওয়া না পাওয়া একেবারে ব্যক্তিনিষ্ঠ একটা ব্যাপার। অনেকে আছেন যারা বলেন সে অমুখ সিনেমা দেখে, অমুক গল্প পড়ে, জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শিখেছেন, তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ইত্যাদি। যাঁরা এখনও বিনোদনের মাধ্যমেই (তা সে কয়েক মিনিটে, কয়েক লাইনেই হোক) সত্যকে জানার, জ্ঞানার্জনের বা জীবন পরিবর্তনকারী প্রেরণা খুঁজার চেষ্টা করেন তাঁদের জন্য জানিয়ে রাখি এর জন্য কি কি উন্নততর বিকল্প উপায় ইতিমধ্যে আছেঃ

১। ৪ খন্ডে নন্দন্তত্বের বিশ্বকোষ (এncyclopdia of aesthetics), প্রত্যেক খন্ডই ৫০০ পৃষ্ঠার।

২। ২ খন্ডে মানব অনুভূতির বিশ্বকোষ (ENcyclopedia of Human Emotions) প্রত্যেক খন্ড ৭৫০ পৃষ্ঠার।(প্রকাশক McMillan)

৩। ৪ খন্ডে মানব আচরণের বিশ্বকোষ (ENcyclopedia of Human Behaviour) প্রত্যেক খন্ড ৭০০ পৃষ্ঠার। ) (প্রকাশক Academic Press)

৪। ২ খন্ডে নীতিশাস্ত্রের বিশ্বকোষ (Encyclopedia of Ethics) মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪০০ (প্রকাশক Garland Publishers)

৫। ৪ খন্ডে ব্যবহারিক নীতিশাস্ত্রের বিশ্বকোষ (Encyclopedia of Applied Ethics) মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০০০। (প্রকাশক Academic Press)

৬। ৪ খন্ডে জৈবনীতিশাস্ত্রের বিশ্বকোষ (Encyclopedia of Bioethics) মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৮৪০ (প্রকাশক McMillan)

তিন ঘন্টার সিনেমায় কয়েক মিনিটে বা ৩০০ পৃষ্ঠার বইএর কয়েক লাইনে যারা জ্ঞান বা সত্য খুঁজেন তারা চিন্তা করুন উপরের ঐ বিশাল গ্রন্থগুলিতে বিনোদনের ঐ পুরু প্রলেপ একেবারেই নেই, সমস্তটাই মূল কথা, তথ্য, জ্ঞান, উপলব্ধি। আর এটা তো একটা নমুনা মাত্র। আরো অনেক বিষয়ে, এরকম আরও কত জ্ঞানের সূত্র আছে, যা ক্রমাগত পরিবর্ধিত, পরিবর্তিত হচ্ছে তার খবর কে রাখছে।